অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্জে সেনা ট্রাকে জঙ্গি হামলায় জেরা করা গ্রামের যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু


ভারতে জম্মু-কাশ্মীরে পুলওয়ামা কায়দায় পুঞ্চে জঙ্গি হামলার পরে গোটা উপত্যকা জুড়ে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে ভারতের সেনা ও পুলিশ। ওই হামলায় অন্তত ৮ জন জঙ্গি দুটি দলে ভাগ হয়ে হামলা চালিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ওই জঙ্গিরা জইশ ও লস্কর দলের বলেও অনুমান। জঙ্গিরা কীভাবে কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে সেনা কনভয়ে ঘাপটি মেরে ছিল, সেই নিয়েই সন্দেহ দানা বেঁধেছে। গ্রামেরই কেউ জঙ্গিদের খবর দিয়েছিল বা সাহায্য করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। সেই বিষয়ে জেরার জন্য নিকটবর্তী গ্রাম থেকে যাকে ডেকে পাঠিয়েছিল পুলিশ সেই যুবকও বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।

মৃত যুবকের নাম মুক্তার হুসেন শাহ। মেন্দার তেহসিলের নার গ্রামের বাসিন্দা মুক্তার। পুলিশ জানিয়েছে, হামলার পরে গ্রামেরই বেশ কয়েকজনকে সন্দেহ করে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। পুলওয়ামার হামলাতেও গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে জঙ্গিযোগের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।

জানা গেছে, মুক্তারকে ডেকে পাঠানো হয় মঙ্গলবার ২৫ এপ্রিল সকালে। সন্ধেতেই বিষ খান তিনি। রাজৌরির সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। হাসপাতালে গিয়ে তাঁর বয়ান নেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। তাতে কোনও কিছুই স্বীকার করেনি মুক্তার। তাঁর দাবি ছিল, বাড়িতেই অশান্তির কারণে বিষ খান তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, মুক্তারকে আলাদা করে সন্দেহ করা হয়নি। জঙ্গি হামলার পরে ওই গ্রামেরই ৬০ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার মধ্যে মুক্তারও ছিল। তবে তাঁর কথাবার্তা অসংলগ্ন ছিল, তাতে সন্দেহ হয় পুলিশের। ছেড়ে দেওয়ার পরেও ফের ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। তারপরেই শোনা যায়, মুক্তার বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বুধবার হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

দুই জঙ্গিগোষ্ঠীর মোট ৮ জন সদস্য কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলায় সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা চালায়। যার ফলে মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সেনার ৫ জন জওয়ানের। সেই ঘাতক জঙ্গিরা নাকি নিকটবর্তী গ্রামেই লুকিয়ে আছে, তেমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, জঙ্গিরা সকলে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর সদস্য। লুকিয়ে কাঁটাতার অতিক্রম করেছে তারা। প্রতিরক্ষা সূত্রের দাবি, রাজৌরিতে স্থানীয় জঙ্গিদের সহায়তায় কাঁটাতার পেরিয়েছে পাকিস্তানের এই জঙ্গিরা। এই কাজে গ্রামের লোকেরও মদত আছে বলে অনুমান পুলিশের। জইশ সমর্থিত একটি জঙ্গিগোষ্ঠী এই হামলার দায়ও স্বীকার করেছে বলে খবর। হামলায় লস্কর গোষ্ঠীরও হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সেনা ট্রাক ভিমবের গলি দিয়ে যাওয়ার সময়েই অতর্কিতে গুলি চালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। তুমুল বৃষ্টি ও দৃশ্যমানতা কম থাকায় শুরুতে ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি সেনা জওয়ানরা। তবে ট্রাকে গুলি এসে লাগার পরই সতর্ক হয়ে যান সকলে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র গোয়েন্দাদের অনুমান, দুই পক্ষের কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছিল। কারণ ট্রাকটির দু’পাশে অসংখ্য বুলেট গেঁথে ছিল। অনুমান, গুলি চালাতে চালাতেই আচমকা গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। ট্রাকের গায়ে গিয়ে লাগে গ্রেনেড। দাউদাউ করে আগুন ধরে যায়। ভেতরেই ঝলসে মৃত্যু হয় পাঁচ জওয়ানের। সেই সময় ঘন ঘন বাজও পড়ছিল। তাই শুরুতে মনে করা হয়েছিল বাজ পড়ে ট্রাকে আগুন লেগে গেছে। কিন্তু পড়ে বোঝা যায়, দুর্যোগের কারণে নয়, জঙ্গী হামলাতেই নিহত হয়েছেন জওয়ানরা।

XS
SM
MD
LG