ভারতে কুস্তিগিরদের অবিরাম প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে পড়ে আত্মহত্যার হুমকি দিলেন রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রধান ব্রিজভূষণ সিং। যৌন হেনস্থার একাধিক অভিযোগ রয়েছে এই বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ২৭ এপ্রিল রাতে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেন তিনি, যাতে তিনি জানান যে এই পরিস্থিতিতে তিনি কতটা অসহায় এবং এর চেয়ে তার মরে যাওয়াও ভাল।
ওই ভিডিওয় ব্রিজভূষণকে বলতে শোনা যায়, "বন্ধুরা, আমি যখন দেখছি আমি কী পেয়েছি বা কী হারিয়েছি, আমি অনুভব করছি যে আমার আর লড়াই করার শক্তি নেই। আমার অসহায় লাগছে। এর চেয়ে আমার মৃত্যুও ভাল, এরকম জীবন আমি বাঁচতে চাই না। এরকম জীবনে বেঁচে থাকার চেয়ে যদি মৃত্যু এসে আমায় জড়িয়ে ধরত, তাও ভাল হতো।"
ভিনেশ ফোগত, সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়াদের মতো তারকা কুস্তিগিরদের নেতৃত্বে গোটা দেশজুড়ে দ্বিতীয় দফার বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়েছে নতুন করে। জানুয়ারি মাসেই একবার তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল এই নিয়ে। সে সময়েই ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে প্রথম যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। দেশের প্রায় অধিকাংশ কুস্তিগিররা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান। কেন্দ্র সরকারের মধ্যস্থতায় সেই বিক্ষোভ উঠে গেলেও এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা না হওয়ায় ফের পথে নেমেছেন ভারতীয় কুস্তিগিররা।
ইতিমধ্যেই বহু মানুষ, খেলোয়াড় এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালেও, বৃহস্পতিবার কুস্তিগিরদের এই আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পিটি ঊষা। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, "খেলোয়াড়দের এভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা ঠিক হয়নি। কমিটির রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা উচিত ছিল। নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে চলেছেন তাঁরা। যা খেলা ও দেশের জন্য ঠিক নয়।"
ঊষার এই কথায় বেজায় চটেছেন কুস্তিগিররা। অলিম্পিক্স পদকজয়ী সাক্ষী মালিক বলেন, "পিটি ঊষার কথায় আমরা ব্যথিত। একজন মহিলা হয়েও উনি আমাদের আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন না। উল্টে আমাদের আন্দোলনে নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করছেন।" তিনি আরও বলেন, "আমরা কি কোনও অন্যায় করেছি? শান্তিতে ধর্নায় বসেছি। বিচার পেলে এমন কাজ করতাম না।" কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী ভিনেশ ফোগত বলেন, "পিটি ঊষাকে অনেকবার ফোন করা হয়েছিল। উনি আমাদের ফোন ধরেননি।"
অন্যদিকে অলিম্পিক্সে সোনা জয়ী শ্যুটার অভিনব বিন্দ্রা কুস্তিগিরদের সমর্থনে ট্যূইট করেছেন ইতিমধ্যেই। তিনি লিখেছেন, "আমরা অনেক পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিই এবং দেশের হয়ে খেলি। আমাদের অ্যাথলিটদের যদি এভাবে
পথে নেমে প্রতিবাদ করতে হয়, তাহলে তা চিন্তার বিষয়। যাঁরা আক্রান্ত, আমি মন থেকে তাঁদের সঙ্গে আছি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, এই বিষয়টি যেন যথেষ্ট নিরপেক্ষ গুরুত্ব পায়। এই ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে, নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়া কতটা জরুরি।"
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন ফাইল করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের আবেদনে বলা হয়েছে, তাঁরা যৌন হেনস্থার অভিযোগে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের কাছে একাধিকবার এফআইআর করতে গেলেও ব্যর্থ হন। আবেদনে বলা হয়েছে, "যে মহিলা অ্যাথলিটরা আমাদের দেশকে গর্বিত করেন, তাঁরাই যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের প্রাপ্য সমর্থন না পেয়ে তাঁরা বিচার পাওয়ার জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন।" সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, "দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা আন্তর্জাতিক কুস্তিগিরদের পিটিশনে যৌন হেনস্থার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনার প্রয়োজন।"