ভারতের কর্নাটকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে একটাই সভা করেছেন জাতীয় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। দ্বিতীয় সভা বা রোড শো করার প্রশ্ন ওঠে না। কারণ একটু পরেই নির্বাচনী প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। সনিয়ার সেই একমাত্র সভাটি নিয়েও এবার সরব হয়েছে বিজেপি। সোমবার ৮ মে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে পদ্ম শিবির প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকেছে । বলেছে, অবিলম্বে সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক কমিশন। বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা তথা মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নালিশ জানিয়েছে কংগ্রেস নেত্রীর বিরুদ্ধে।
সনিয়ার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ বিজেপির? শনিবার কর্নাটকের হুবলির সভায় সনিয়া বলেছিলেন, "কংগ্রেস কর্নাটকের সুনাম, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। আমরা কাউকে এসব বিনষ্ট করতে দেব না।" নেত্রীর সেই বক্তব্য কংগ্রেসের অফিসিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল-সহ দলের সমস্ত সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করা হয়। সনিয়ার ভাষণের সঙ্গে দলের তরফে যোগ করা হয়, এটা হল সাড়ে ছয় কোটি কর্নাটকবাসীর স্বার্থ রক্ষায় কংগ্রেস নেত্রীর সংকল্প।
বিজেপির আপত্তি সনিয়ার ভাষণে ‘সার্বভৌমত্ব’ শব্দটি নিয়ে। পদ্ম শিবিরের কথায়, সার্বভৌমত্ব কথাটি দেশের জন্য প্রযোজ্য। কর্নাটকের ক্ষেত্রে শব্দটি প্রয়োগ করে সনিয়া আসলে ওই রাজ্যটিকে পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে দেখাতে চেয়েছেন।
সনিয়ার মুখে ‘সার্বভৌমত্ব’ শব্দটি হাতিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার একাধিক জনসভায় মোদী কংগ্রেস নেত্রীর ওই বক্তব্য নিয়ে বলেন, কংগ্রেসের ‘শাহি পরিবার’ বলেছে তারা কর্নাটকের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চায়। সনিয়ার উদ্দেশে মোদীর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, "আপনি কি জানেন এর অর্থ কি। একটি দেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন সেই দেশকে সার্বভৌম দেশ বলা হয়।" প্রধানমন্ত্রীর কথায়, "কংগ্রেস যা বলছে তার অর্থ হল তারা বিশ্বাস করে কর্নাটক ভারত থেকে আলাদা।"
বিজেপির অভিযোগ সম্পর্কে কংগ্রেস দলগতভাবে এখনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে প্রচার সভায় নেতারা বলছেন, সনিয়ার ওই মন্তব্যকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেসকে মোকাবিলা করার কোনও অস্ত্র তাঁর হাতে নেই। সনিয়া সার্বভৌমত্ব শব্দটি কর্নাটকের ভৌগলিক এলাকা অর্থে বলেননি। তিনি রাজ্যের স্বার্থরক্ষার কথা বলেছেন।
আসলে প্রতিপক্ষের কথাকে হাতিয়ার, প্রয়োজনে বিকৃত করার বড় অনুশীলন দেখা গেছে কর্নাটকের এবারের ভোটের প্রচারে। তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে কংগ্রেসই। তারা বজরং দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ইস্তাহারে জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সেই ঘোষণাকেই বজরংবলী অর্থাৎ হনুমান ভগবানের অবমাননা বলে প্রচারে ঝড় তুলে দিয়েছেন। কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে গিয়েছে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের মুখে ‘মোদী বিষধর সাপ’ এবং বিজেপি নেতাদের সনিয়াকে ‘বিষকন্যা’ বলে আক্রমণ নিয়েও নির্বাচন কমিশনের দু পক্ষই নালিশ ঠুকেছে। নালিশ জমা পড়েছে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং খাড়্গে-সহ কংগ্রেসের একাধিক নেতার বিরুদ্ধেও।