অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

এইডসের ঝুঁকিতে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চল


বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে এইচআইভি এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিভাগের মধ্যে এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা জেলা। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, গত ৬ মাসে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যান্টি রেক্ট্রোভাইরাল থেরাপী (এআরটি) সেন্টারে ৪২ জনের নমুনায় এইডসের জীবাণু শানক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত সংখ্যা খুলনা জেলায়। একই সময়ে এই জীবাণু বহনকারী রোগে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।

এছাড়া, চলতি বছরে বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে ৪৩ জন নতুন এইডস রোগী রেফার করা হয়। সে হিসাব ধরলে, গত ছয় মাসে খুলনা বিভাগে এইডসের জীবাণুবাহী নতুন রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে ৮৫ জন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষা না করা, যৌন কর্মীদের পল্লী ও ভাসমান যৌনকর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা,যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহারে অনীহার কারণে পরিস্থিতি জটিল রূপ নিচ্ছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের তথ্যমতে, গত ৬ মাসে (২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত) ৪৬০ জনে এইডস পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে, নতুন করে ৪৫ জনের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে পুরুষ ২৭ জন এবং ১৫ জন নারী রয়েছেন।

শনাক্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা খুলনা জেলায় সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় এইডস আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন ১৯ জন। এছাড়া, বাগেরহাটে ১০ জন,যশোরে ৬ জন, নড়াইলে ৩ জন এবং বরগুনা, গোপালগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরায় ১ জন করে এইডস রোগী বলে শনাক্ত হয়েছেন।

একই সময়ে, এইডস আকান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের; এর মধ্যে পুরুষ ৮ জন। মৃতদের মধ্যে, যশোরের ৬ জন, খুলনার ৩ জন, নড়াইললের ১ জন সাতক্ষীরার ১ জন, বাগেরহাটের ১ জন ও মেহেরপুরের ১ জন। তারা সকলেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এআরটি সূত্রমতে, ২০২২ সালে নভেম্বর মাসে ৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে, নতুন করে এইডস পজিটিভ পাওয়া যায় ২ জনের মধ্যে। একই সময়ে মৃত্যু হয় ৩ জনের। এছাড়া ডিসেম্বর মাসে ৭৭ জনের পরীক্ষায় পজিটিভ হয় ৫ জন; ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৯১ জন নমুনা পরীক্ষা করা হলে ২ জন পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়; একই সময়ে মৃত্যু হয় ৩ জনের।

এর পর, ফেব্রুয়ারিতে ৮৪ জনের পরীক্কা করা হলে মধ্যে ১১ জন পজিটিভ পাওয়া যায়; এদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়। মার্চে পরীক্ষা করা ৭২ জনের নমুনার মধ্যে ১৪ জন পজিটিভ বলে চিহ্নিত হয়; এদের মধ্যে মারা যায় ২ জন। সর্বশেষ গত এপ্রিলে ৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়; এইডস পজিটিভ পাওয়া যায় ৮ জনের নমুনায়। এ সময়ে মারা যায় ২ জন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, “হাসপাতালের এআরটি সেন্টার থেকে বিনামূল্যে এইডস রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।” এইডস রোগীদের ওষুধে কোনো ঘাটতি নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “এইডস বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্ঞান কম, সচেতনতা কম। এ কারণে তারা এই ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।” একমাত্র সচেতনতার মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।।

একই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ( মেডিসিন) ও এআরটি সেন্টারের ফোকাল পার্সন ডা. দীপ কুমার দাশ বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্য এইডস আক্রান্ত হয়, বিষয়টি তেমন নয়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত নিলেও এইডসে আক্রান্ত হয়। তাই আক্রান্তদের প্রতি অবজ্ঞা নয়, তাদের ভালবাসার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ।”

এআরটি সেন্টারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর দিবেশ ওঝা বলেন, “গত ৬ মাসে এ সেন্টার থেকে ৪৬০ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৪২ জন শরীরে এইডস পজিটিভ পাওয়া গেছে। একই সময়ে বিভিন্ন জেলা থেকে এ সেন্টারে এইডস পজিটিভ ৪৩ জনকে রেফার করা হয়। খুলনা বিভাগে গত ছয় মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮৫ জন। এ পর্যন্ত এআরটি সেন্টারে আইডিভুক্ত এইডস রোগীর সংখ্যা ৫৭৫ জন। এর মধ্যে নিয়মিত ওষুধ সেবন করছেন ৪৪০ জন।”

উল্লেখ্য, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই সেন্টারে (২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত) ৯২৩ জনের এইডস পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে, তিন শিশুসহ ৬৫ জনের এইডস শনাক্ত করা হয়। শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ৩৩ জন ও নারী ৩২ জন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।

এর আগে ২০২১ সালে ৯২৩ জনকে পরীক্ষা করা হয়। সে সময় শনাক্ত হয়েছিলো ২৮ জন। ২০২০ সালে পরীক্ষা করা হয় ৮২০ জনকে; এইডস শনাক্ত হয় ৩২ জনের শরীরে। আর ২০১৯ সালে ৫৩৫ জনকে পরীক্ষা করার পর এইডস আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছিলো ৪২ জন।

XS
SM
MD
LG