ভারতে কর্নাটক বিধানসভার নির্বাচনের জন্য ভোট নেওয়া হবে বুধবার ১০ মে। সোমবার বিকালে শেষ হয়েছে প্রচার। প্রচার শেষের পর দেখা যাচ্ছে কর্নাটকের এই ভোটে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে একটিও অভিযোগ জমা পড়েনি। কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য, রাহুল কংগ্রেসের তারকা প্রচারক হওয়ার পর এই প্রথম কোনও নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।
কর্নাটকের প্রচারে গান্ধী পরিবারের বাকি দুই সদস্য প্রিয়ঙ্কা এবং সনিয়া গান্ধী ছিলেন তারকা প্রচারকের ভূমিকায়। প্রিয়ঙ্কা জনসভার পাশাপাশি একাধিক রোড শো করেছেন। সেগুলিতে ভিড় এবং উচ্ছ্বাস দেখে বিজেপির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও একাধিক রোড শো করেন কর্নাটকের প্রচারে। মোদী রোড-শো’র প্রচারের সাড়া পেয়েছেন কর্নাটকেও। ভিড় কিছু কম ছিল না প্রিয়ঙ্কার রোড শো’তেও। কংগ্রেস অনেক ভাবনাচিন্তা করে প্রিয়ঙ্কাকে নামায়। রাহুলের মতো প্রিয়ঙ্কার বিরুদ্ধে কমিশনে নালিশ করার মতো কিছু পায়নি বিজেপি বা অন্য কোনও দল।
শনিবার একটি মাত্র সভা করেছেন সনিয়া গান্ধী। সেই সভায় তিনি কর্নাটকের ‘সার্বভৌমত্ব’ নিয়ে সরব হয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, সার্বভৌমত্ব হল দেশের অখণ্ডতার বিষয়। কংগ্রেস নেত্রী কর্নাটকের সার্বভৌমত্বের কথা বলে আসলে রাজ্যটিকে ভারতের বাইরের অংশ বলে দেখাতে চেয়েছেন। মোদী আরও অভিযোগ করেন, "এই কথা থেকে বোঝা যায়, টুকরে টুকরে গ্যাং আসলে কংগ্রেসের মাথায় চড়ে বসেছে।"
সোমবার বিকালে বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সনিয়ার মন্তব্য নিয়ে নালিশ ঠোকেন। মঙ্গলবার সকালে কমিশন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে চিঠি পাঠিয়ে সনিয়ার বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছে। যদিও কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সনিয়া আদৌ সার্বভোমত্বের কথা বলেননি। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সনিয়ার হিন্দি ভাষণের বয়ানে শব্দটি নেই। তবে সনিয়ার হলে কংগ্রেসের ডিজিটাল টিম যে ট্যুইট করে তাতে কংগ্রেস নেত্রীর বয়ানে ইংরিজি Sovereignty or Integrity শব্দ দুটি ছিল। মনে করা হচ্ছে, কংগ্রেসের ডিজিটাল সেলের ভুলেই সনিয়াকে হলুদ কার্ড দেখানোর সুযোগ পেয়েছে কমিশন। তবে সনিয়ার বিরুদ্ধে নালিশ বিজেপির শেষ মুহূর্তের রণকৌশল বুঝতে পেরে কংগ্রেস নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে সেভাবে মুখ খুলছেন না।
তবে দলের মধ্যে খুব চর্চা হচ্ছে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে। প্রচারে মানহানি, অসম্মানজনক মন্তব্য করায় কমিশনের কাছে বিজেপি দু’বার নালিশ ঠুকেছে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্য সভায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বিষধর সাপের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অভিযোগ দায়ের হয়েছে কংগ্রেস নেতা ডিকে শিবকুমার, শিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধেও। অন্যদিকে, কংগ্রেস তিনবার অভিযোগ ঠোকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। ব্যতিক্রম রাহুল।
যদিও কর্নাটকের প্রচারেও তিনি লাগাতার নরেন্দ্র মোদীকেই নিশানা করেছেন। কঠোর আক্রমণ করেছেন মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতায়। প্রচারের শেষ প্রহরে মোদীর রোড শো এবং রাহুলের বাসযাত্রাই ছিল মূল আলোচ্য। সোমবার বেঙ্গালুরুতে সাধারণ সরকারি বাসে চড়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাহুল। তার আগে চড়েছেন এক ফুড ডেলিভারি পারসনের মোটর সাইকেলে। মহিশূরে ক’দিন আগে প্রিয়ঙ্কা একটি রেস্তরাঁয় ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে কিচেনে ঢুকে ধোসা বানান। সেলফি তোলেন কিচেন স্টাফদের সঙ্গে।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অভিযোগও না ওঠার পিছনে কাজ করেছে সম্ভবত মোদী পদবিধারীদের মানহানির মামলার সাজা। কর্নাটকেই আগের লোকসভা নির্বাচনে বিতর্কিত মন্তব্য করার মামলায় সুরাত আদালতের রায়ে তাঁর দু’বছর কারাবাসের সাজা হয়েছে। খারিজ হয়ে গিয়েছে সাংসদ পদ। জামিন মেলেনি সুরাতের জেলা আদালত এবং গুজরাত হাইকোর্ট থেকেও। তবে জামিনের আবেদনের চূড়ান্ত আইনি লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাহুল মুক্ত। কিন্তু তাঁকে মাথায় রাখতে হচ্ছে জামিন পাওয়ার আগে ফের মানহানি জাতীয় অভিযোগ উঠলে জেলযাত্রা আটকানোর কোনও পথ খোলা থাকবে না। সম্ভবত দল এবং আইনজীবীদের পরামর্শে রাহুল সতর্ক ছিলেন।