অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঘূর্ণিঝড় মোখা: বাংলাদেশে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, সরানো হবে কয়েক লাখ মানুষ


ঘূর্ণিঝড় মোখা
ঘূর্ণিঝড় মোখা

বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায়, শুক্রবার (১২ মে) বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ উপকূল এলাকা থেকে কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। বাংলাদেশ ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার একটি ব-দ্বীপ দেশ। দেশটি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার ডেপুটি কমিশনার মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, “উপকূল এলাকার মানুষদের আশ্রয় দেয়ার জন্য ৫৭৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তূত রয়েছে। শনিবার থেকে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়া শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

ইমরান বলেন, “বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় জরুরি সহায়তার জন্য কন্ট্রোল রুম প্রস্তুত রয়েছে। তিনটি বন্দরকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। সরকার শুকনো খাবার, চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ করেছে এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অধীনে ত্রাণ কাজে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”

খুলনায় স্থানীয় প্রশাসন দুই লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জনকে আশ্রয় দেয়ার জন্য ৪০৯টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রেখেছে এবং বাগেরহাট জেলায় কমপক্ষে ৪৪৬ টি সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় তিন ধাপে প্রস্তুতি নিয়েছে ভোলা জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানান, ভোলায় আটটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তিনি জানান, ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে; যাতে প্রায় পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। এছাড়া, ১৩ হাজার ৬০০ সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক এবং পাঁচ হাজার রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক স্ট্যান্ডবাই রয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড় মোখা’র সময় ও পরবর্তী প্রভাব মোকাবেলায় জনগণকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করতে এবং তাদের প্রস্তুত করতে, নদী তীরের এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে চাঁদপুর স্থানীয় প্রশাসন।

শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এর কেন্দ্রস্থলে বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে এবং রবিবার বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকবে।

১২ মে সকাল ৬টায় এটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এক হাজার ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার বন্দর থেকে এক হাজার ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা বন্দর থেকে এক হাজার ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রাবন্দর থেকে এক হাজার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে কেন্দ্রীভূত হয়। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দরসমূহকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা রবিবার (১৪ মে) উপকূলে আঘাত হানতে পারে; যার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যে ১৭৫ কিলোমিটার (১১০ মাইল) বেগে বয়ে যাবে।”

ভারতের আবহাওয়া বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী রাজেন্দ্র কুমার জেনামানি বলেছেন, “এই বছর, উত্তর ভারত মহাসাগরে উদ্ভূত এটিই প্রথম ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়টি মারাত্মক এবং সম্ভবত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের লাখ লাখ জেলে ও উপকূলীয় মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”

পুনে শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি এর জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত মহাসাগর উষ্ণ থাকে এবং বাতাস অনুকূল থাকে, ততক্ষণ ঘূর্ণিঝড়গুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের তীব্রতা ধরে রাখবে।”

অন্যদিকে, মিয়ানমারের আবহাওয়া ও জলবিদ্যা বিভাগের পরিচালক হ্লা তুন বলেছেন যে দেশটির কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের বিষয়ে সতর্ক করেছে এবং বাসিন্দারা প্রয়োজনীয় সরবরাহ মজুত করে রেখেছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্র পরিচালিত গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার সংবাদপত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি প্রতিক্রিয়া সংশ্লিষ্ট মহড়া চালানো হচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, যেখানে দিয়ে ঝড়টি বয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

XS
SM
MD
LG