চলে গেলেন চলচ্চিত্র নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, সোমবার(১৫ মে) সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন।
দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন নায়ক ফারুক। অভিনেতা ফারুকের মরদেহ মঙ্গলবার(১৬ মে) ভোরের ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হবে।
এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন নায়ক ফারুক। তিনি লাঠিয়াল, সুজস সখী, নয়নমনি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, আলোর মিছিল, দিন যায় কথা থাকে, মিয়া ভাইসহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। লাঠিযাল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৬ সালে আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তিনি সবচেয়ে সফল ও সেরা নায়কদের একজন হিসেবে স্বীকৃত।
তরুণ বয়স থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
প্রখ্যাত অভিনেতা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। সোমবার এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য এবং গুণগ্রহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এদিকে, চিত্রনায়ক, আইনপ্রণেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এই বিশিষ্ট অভিনেতা তার কর্মের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।” প্রধানমন্ত্রী তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ফারুকের মৃত্যুতে শোকে ছায়া পড়েছে বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে। তার অনেক সহকর্মী ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেছেন।
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেন, “বিদায় নায়ক ফারুক। বিনম্র শ্রদ্ধা। আপনার আত্মার শান্তি হোক।” ওমর সানি লিখেছেন, “আল্লাহ আমাদের লিজেন্ড ফারুক ভাইকে জান্নাত নসিব করুন। আমিন।”
বিজরী বরকতুল্লাহ লেখেন “কিংবদন্তী চলচ্চিত্র অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়ক ফারুক সিংগাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। আল্লাহ তার সকল গুনাহ মাফ করে জান্নাত দান করুন, আমিন।”
চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল লিখেছেন, “প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রাখা ঢাকার সিনেমার কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (আমাদের ফারুক ভাই)। এই র্কীতিমান মহান মানুষটির প্রয়াণে গভীর শোক ও তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।”
অভিনেত্রী তারিন জাহান লেখেন, “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সোমবার ঘণ্টা দুয়েক আগে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ভাই।”
চিত্রনায়িকা জাহারা মিতু লিখেছেন, “বিটিভিতে আপনার ছবি দেখে বড় হয়েছি। গ্রাম্য ছেলের ভূমিকায় কি অনবদ্য আপনি। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুক। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
অভিনেতা মিশা সওদাগর বলেন, “বিদায় মিয়াভাই’। আজ সকাল ৮:৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা ১৭ (গুলশান-বনানী) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ভাই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।”
চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজু লিখেছেন, “বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত, তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ফারুক ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। মৃত্যু অনিবার্য, তবু মৃত্যু আমার ভালো লাগে না। এই সংবাদটি শুনলেই মন বিবশ হয়ে যায়। যে মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন, হাজার চেষ্টা করলেও তার সাথে আর কোনোদিন কথা বলা যাবে না, পৃথিবীর কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে আর জানা যাবে না, মানুষটি কেমন আছেন! কী ভীষণ অসহায় আমরা মৃত্যুর কাছে।”
চিত্রনায়ক জায়েদ খান লিখেছেন, “এতক্ষণ কিছু লিখিনি, কারণ মনে হয়েছে আপনি বেঁচে আছেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। এটা তো কথা ছিলো না। বলেছিলেন; জায়েদ আসছি, আড্ডা হবে। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি নেই।”