অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর হস্তক্ষেপে স্থির হল ভারতের কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর নাম


কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর হস্তক্ষেপে স্থির হল ভারতের কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর নাম

ভারতে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি নিয়ে সিদ্দারমইয়া বনাম শিবকুমারের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত যবনিকা পড়েছে। সূত্রের খবর, বুধবার ১৭ মে গভীর রাতে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর দেওয়া সমাধান সূত্রে সায় দেন শিবকুমার। নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন, 'ম্যাডাম'-এর কথায় তিনি হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে সায় দিচ্ছেন । তার ফলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সি সিদ্দারামইয়া ফের কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন । উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন ডিকে শিবকুমার। একই সঙ্গে তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদেও থাকবেন। সামলাবেন বেশ কয়েকটি দফতরও।

এই ফরমুলায় সিদ্দাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মেনে নেওয়ার জন্য বুধবার দিনভর কংগ্রেস নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়। একটি সূত্রের খবর, শিবকুমারকে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ দফতর দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। তবু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবি ছাড়তে চাননি শিবকুমার।

কিন্তু বুধবার রাতে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়। সনিয়া কথা দেন, সিদ্দারামাইয়া মুখ্যমন্ত্রী হলেও সরকারের নীতিগত এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্তই শিবকুমারকে না জানিয়ে নেবেন না। দলের তরফে সনিয়া গান্ধী স্বয়ং এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় গভীর রাতে নিজের সম্মতির কথা দলকে জানান শিবকুমার। শুধু তাই নয়, শিবকুমারের দাবি মেনেই একজন উপমুখ্যমন্ত্রী রাখা হয়েছে। আগে ঠিক ছিল শিব ছাড়াও একজন মুসলিম ও একজন দলিতকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হবে।

পর্যবেক্ষকদের মত, শিবকুমার সনিয়ার খুবই স্নেনধন্য। ইডির মামলায় তিনি তিহাড় জেলে থাকার সময় সনিয়া জেলে গিয়ে দেখা করেছিলেন। গত শনিবার কর্নাটকের ভোটের ফল ঘোষণার দিন মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে সনিয়ার তাঁর সঙ্গে জেলে গিয়ে দেখা করার কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শিবকুমার। বলেন, সনিয়াকে কথা দিয়েছিলেন, কর্নাটকে দলকে ক্ষমতায় ফেরাবেন।

রাজনৈতিক মহলের মতে, শিবকুমারের ওই কান্না ছিল মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসেনি। যদিও কংগ্রেস সূত্রের খবর, ৭৫ বছর বয়সি সিদ্দারামইয়া ফের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চললেও শিবকুমার কার্যত সিএম নম্বর টু হতে চলেছেন।

সনিয়া গান্ধী কর্নাটক নিয়ে সরাসরি সামনে আসেননি। মঙ্গলবার ১৬ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি সিমলায় ছিলেন। দিল্লি ফেরার পরও কর্নাটকের দুই নেতার সঙ্গে দেখা করেননি। কিন্তু প্রতি মুহূর্তের অগ্রগতি তাঁকে জানাচ্ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে এবং রাহুল গান্ধী। সিদ্দা ও শিব আলাদা করে দেখা করেন রাহুলের সঙ্গে।

পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ, সনিয়া যেমন খাড়্গের সম্মানের কথা ভেবে সরাসরি সামনে আসেননি, তেমনই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বও চেয়েছে সনিয়াকে শেষ মুহূর্তে আসরে নামাতে। সনিয়া নিজে চেয়েছিলেন শিবকুমার মুখ্যমন্ত্রী হোন। কিন্তু রাহুল গান্ধী চাননি।

শিবকুমারের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই, আয়করের গুচ্ছ মামলা থাকায় রাহুল তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাবে সায় দেননি। বিশেষজ্ঞদের মত, খাড়্গে তাঁর নিজের রাজ্য বলে সরাসরি কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেননি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ে। কৌশলে বল ঠেলে দিয়েছেন গান্ধী পরিবারের দিকেই। ফলে ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে বিবাদ হলে নিজেকে তা থেকে মুক্ত রাখার রাস্তা খোলা রেখেছেন খাড়্গে। কারণ, কর্নাটকে এখনই প্রবীণ নেতা তথা বিধায়ক জি পরমেশ্বর প্রকাশ্যে বলেছেন, সিদ্দারামাইয়া ওবিসি। কর্নাটকে কংগ্রেসের উচিত ছিল একজন দলিতকে মুখ্যমন্ত্রী করা। কর্নাটক এখনও পর্যন্ত কোনও দলিতকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পায়নি।

XS
SM
MD
LG