বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) জানিয়েছে, মানুষের কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে, গত ৫০ বছরে ১১ হাজার ৭৭৮টি দুর্যোগ ঘটেছে। এতে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। চরম আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সংক্রান্ত ঘটনার কারণে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে এশিয়ায়। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই প্রায় ১০ লাখ, অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২২ মে) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ডব্লিউএমও বলেছে, জলবায়ু বিপর্যয় এবং চরম আবহাওয়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি ১০ মৃত্যুর মধ্যে ৯টি হয়েছে এ দেশগুলোতে। আর এ জন্য ৬০ শতাংশ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ডব্লিউএমও এর প্রতিবেদনে বলা হয়, আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সম্পর্কিত সমস্যার কারণে ১৯৭০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার দুর্যোগ ঘটেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো তাদের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ‘অনুপাতিকভাবে’ উচ্চ ব্যয়ের শিকার হয়েছে।ডব্লিউএমও-এর মহাসচিব পেটেরি তালাস বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়, মানুষগুলো আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সম্পর্কিত বিপর্যয়ের প্রভাব সহ্য করছে।”
ডব্লিউএমও বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে গত অর্ধ শতাব্দীতে বেশ কয়েকটি বিপর্যয়ের কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটিতে দুর্যোগের প্রভাব ছিলো জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি, কিছু বিপর্যয় দেশগুলোর পুরো জিডিপিকেই শেষ করে দিয়েছে।
সংস্থাটি আরো জানায়, আফ্রিকায় জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে প্রাণহানি হয়েছে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮৫ জনের। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ খরা’র কারণে মারা গেছে।
মহাসচিব পেটেরি তালাস জোর দিয়ে বলেছেন, “বর্তমানে উন্নত প্রাথমিক সতর্কতা এবং সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দুর্যোগের মারাত্মক প্রভাব প্রশমিত করতে সাহায্য করছে। প্রাথমিক সতর্কতা জীবন বাঁচায়।” এই জাতিসংঘ সংস্থা আরো উল্লেখ করেছে যে ২০২০ ও ২০২১ সালে রেকর্ড করা মৃত্যু আগের দশকের গড় থেকে কম ছিলো।
গত সপ্তাহে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টিকারী প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার উদাহরণ দিয়ে মহাসচিব তালাস বলেন, “অতীতে এই ধরনের দুর্যোগে উভয় দেশেই মৃত্যুর সংখ্যা দশ হাজার থেকে কয়েক লাখ হয়েছিলো।” প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্যোগের কথা মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে পাওয়া গেলে, দুর্যোগপরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি ৩০ শতাংশ কম হতে পারে।
সকলের জন্য জাতিসংঘের প্রাথমিক সতর্কতা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডব্লিউএমও তার চতুর্বার্ষিক ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল কংগ্রেসের জন্য আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়ের মানবিক ও অর্থনৈতিক ব্যয়ের ওপর তার নতুন অনুসন্ধানের ফলাফল উপস্থাপন করেছে। সোমবার জেনেভায় এই সংগ্রেস শুরু হয়েছে।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ পৃথিবীর সকলের কাছে দুর্যোগের আগাম সতর্কতা পরিষেবা পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করা। গত বছরের নভেম্বরে, শারম আল-শেখ-এ কপ-২৭ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ উদ্যোগের সূচনা করেছিলেন।
বর্তমানে, পৃথিবীর অর্ধেক অংশ দুর্যোগ পূর্ববর্তী পূর্বাভাস ব্যবস্থার আওতায় রয়েছে। আর এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।