গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে যে চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩) বাংলাদেশে রাজস্ব ঘাটতি হবে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে বাজেট ঘাটতি আরো বাড়বে। সিপিডি পরামর্শ দিয়েছে যে সরকারের উচিত বিদেশি অর্থায়নে বাজেটের সহায়তা জোগাড় করাকে অগ্রাধিকার দেয়া।
শনিবার (২৭ মে) রাজধানী ঢাকায়, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ফাহমিদা খাতুন বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন। এ সময় সিপিডির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।পর্যালোচনায় বলা হয়, “সরকার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫৪ হাজার ৫০১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।”
আর, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৭৫ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা হয়েছে, এটি সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।সিপিডি ইঙ্গিত দিয়েছে যে সরকার দেশীয় উৎস (ব্যাংক) থেকে ঋণ গ্রহণ করলে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি মূলক ব্যবস্থা তৈরি হবে। তারা পরামর্শ দিয়েছে যে সরকারের উচিত বিদেশি অর্থায়নে বাজেটের সহায়তা জোগাড় করাকে অগ্রাধিকার দেয়া।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও, অভ্যন্তরীণ বাজারে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। সিপিডি জানিয়েছে, বিপিসি’র গত সাত বছরে; অর্থবছর ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে; মোট মুনাফা ছিলো প্রায় ৪৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। আয়কর হিসাবে সাত হাজার ৭২৭ কোটি টাকা দেয়ার পর, বিপিসির নিট মুনাফা ছিলো ৩৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।
এতে বলা হয়েছে, “একচেটিয়া ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ায়, দেশের নাগরিকদের জরিমানা করে ক্ষতিপূরণ লাভ করা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।” সংস্থাটি সরকারকে মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সেখানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী কাজ করছে বলে জানায় তারা।
সিপিডি বলেছে যে ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সৌদি আরব থেকে দেশে প্রায় ৩৮৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিলো। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স কমে ৩০৪ কোটি ডলার হয়েছে।সিপিডি সন্দেহ করছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সের আকস্মিক বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিংয়ের বিভিন্ন আকারে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পাঠানো চোরাচালানকৃত অর্থের পুনর্ব্যবহার হচ্ছে।
পন্যের দাম কমানোর জন্য সাময়িক স্বস্তি হিসেবে সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। বলেছে, সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং প্রয়োজন। সিপিডির দৃষ্টিতে দরিদ্রদের সরাসরি সহায়তার সুযোগ বাড়ানো দরকার। সঠিক মানুষ পাচ্ছে কিনা তা-ও নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক নয় এবং লক্ষ্যমাত্রার কম হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে গবেষণা সংস্থাটি। বলেছে, মে ও জুন মাসে (চলতি অর্থবছরের শেষ দুই মাস) তা ৪১ শতাংশ বাড়াতে হবে, যা খুবই কঠিন।