বাংলাদেশের খুলনা জেলার সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় সুপেয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে দোকানে বিক্রি হচ্ছে খোলা পানি, কিনতে হচ্ছে লাইনে দাঁড়িয়ে। অনেককে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে অনেক দূর থেকে। কেউ কেউ ডোবা-নালার পানি পান করছেন।আর, ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত নানা রোগে ভুগছেন। এই সংকটে বসবাস করছেন দুইলাখের বেশি মানুষ।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা দাকোপ উপজেলা ৩টি পৃথক দ্বীপের সমন্বয় গঠিত। এর চারপাশে নদী, খরায় লবনের মাত্রা বেড়েছে জলে, তাই সুপেয় পানির এই সংকট দেখা দিয়েছে। একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে চলছে এই সুপেয় জলের সংকট। দুই লাখের বেশি মানুষ সুপেয় পানির সংকটে আছেন। এমনকি; চায়ের দোকান, খাবার হোটেল, মিষ্টির দোকানে খরিদ্দারকে বিশুদ্ধ পানি দিতে পারছেন না দোকানদাররা।
এই এলাকার কোথাও গভীর নলকুপ নেই; অগভীর নলকুপগুলোর অধিকাংশই অকেজো। কিছু নলকুপের পানি লবণ, আর্সেনিক এবং অতিরিক্ত আয়রনযুক্ত। এই এলাকায়, খাবার পানির অন্যতম প্রধান উৎস পুকুর। পুকুরের পানি ফিল্টার করে পান করতে হয়। খরায় পুকুরগুলোতে পানি স্বল্পতা সৃষ্ঠি হয়েছে। অনেক স্থানে সমাজ ভিত্তিক ফিল্টার বা পিএসএফগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে।
এলাকার স্বচ্ছল ব্যক্তিরা বটিয়াঘাটা, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কিনে জীবন ধারণ করছেন। আর মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে ফিল্টার ছাড়াই পুকুরে পানি নিয়ে পান করছেন। ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিমাই মন্ডলসহ এলাকাবাসী জানান, “প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ নৌকায় যাওয়া আসা করে পার্শ্ববর্তী কৈলাশগঞ্জ এলাকা থেকে বিশুদ্ধ পানি আনতে হচ্ছে। আর যাদের অবস্থা ভালো, টাকা পয়সা আছে তারা পানি কিনে আনেন। গরিব মানুষ সরাসরি পুকুরের পানি পান করছেন।”
চালনা বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী সমরেশ মন্ডল বলেন, “সংকটের কারণে ক্রেতাদের পানি দিতে পারছি না। পুকুরের পানি খাবার অনুপযোগী, কেবল প্লেট ধোয়া আর ঘর পরিষ্কারের কাজ চলছে। খরিদ্দারদের পানি কিনে দিতে হচ্ছে।”
চালনা পৌরসভার কাউন্সিলর মেহেদী হাসান বুলবুল বলেন, “সুপেয় পানি সংকট নিরসনে, পৌরসভার পানি প্রকল্পের আওতায়, একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়েছে। আর, বিভিন্ন এলাকায়পাইপ লাইনের কাজও শেষ হয়েছে। বর্তমানে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, কাজ সম্পন্ন হলেই পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সংকট অনেকটা নিরসন হবে।”
দাকোপ উপজেলা উপ-সহকারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, “এখানে সুপেয় পানির আধারের মধ্যে ২৬৬৮টি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (ট্যাংক), ২৭টি গভীর নলকূপ, ৫০০টি অগভীর নলকূপ সচল রয়েছে।”
দাকোপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান বলেন, “এ উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। সে কারণে উপজেলা পরিষদ থেকে হতদরিদ্র পরিবারের জন্য পানির ট্যাংক বিতরণ করার জন্য একটা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি যে সকল এলাকায় শুকিয়ে যাওয়া পুকুর ও খাল আছে, সেগুলো পযার্য়ক্রমে খননের জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।”