অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ মেডেল বিসর্জন কান্ডে মুখ খুললেন


রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রধান ব্রিজভূষণ সিং
রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রধান ব্রিজভূষণ সিং

ভারতের যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের প্রতিবাদ মঙ্গলবার ৩০ মধ্যে অন্য মাত্রায় পৌঁছেছিল। যৌন হেনস্থার অভিযোগ সত্ত্বেও রেসলিং ফেডারেশনের শীর্ষকর্তা বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ সিং-এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রতিবাদে নিজেদের যাবতীয় মেডেল হরিদ্বারের গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া, ভিনেশ ফোগাটরা। যদিও শেষ পর্যন্ত কৃষক নেতা নরেশ টিকায়েতের অনুরোধে সেই সিদ্ধান্ত বদল করেন তাঁরা। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মোদী সরকারকে পাঁচ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। এদিকে মঙ্গলবার রাতেই এ বিষয়ে মুখ খুললেন অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ। তিনি জানালেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ।

রেসলিং ফেডারেশন-এর প্রধানের আরও দাবি, অর্জিত যাবতীয় পদক জলে ভাসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত একেবারেই কুস্তিগিরদের নিজেদের। মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ছ’বারের বিজেপি বিধায়ক জানান, "আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ। যদি এই অভিযোগে বিন্দুমাত্র সত্যতা থাকে তাহলে আমাকে গ্রেফতার করা হবে।"

"আজকে তো ওরা সব মেডেল গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে গিয়েছিল। পরে সেগুলো টিকায়েতের হাতে তুলে দিয়েছে। এটা ওদের সিদ্ধান্ত, আমরা কী করতে পারি?" পাল্টা প্রশ্ন ব্রিজভূষণের।

প্রসঙ্গত, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের এই প্রতিবাদের সূত্রপাত বেশ কয়েক মাস আগে। রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন অলিম্পিক-কমনওয়েলথ পদকজয়ী কুস্তিগিররা। কিন্তু বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে পুলিশ ন্যূনতম অভিযোগটুকুও নেয়নি বলে দাবি তাঁদের।

গত রবিবার ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করছিলেন, তখন সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেছিলেন ভিনেশ-বজরং-সাক্ষী সহ কুস্তিগিররা। কিন্তু পুলিশ টেনে হিঁচড়ে সেখান থেকে তুলে দেয় তাঁদের। গাড়িতে তুলে তাঁদের আলাদা আলাদা জায়গায় নিয়ে চলে যাওয়া হয়। যন্তর মন্তর থেকে তাঁদের খাটিয়া, গদি, ফ্যানসহ সমস্ত জিনিসপত্র সরিয়ে দিয়ে পুলিশ সাফ জানিয়ে দেয়, সেখানে আর ধর্নায় বসতে দেওয়া হবে না বিক্ষোভকারীদের। এমনকী, উল্টে তাঁদের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করে পুলিশ।

সেই ঘটনার পর মঙ্গলবার ৩০ মে কুস্তিগিররা ঘোষণা করেছিলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর পাওয়া যাবতীয় পদক সন্ধ্যা ৬টার সময় হরিদ্বারের হর কি পৌরি ঘাটে ভাসিয়ে দেবেন তাঁরা। তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কাঁদতে কাঁদতে সাক্ষী, ভিনেশ সহ বাকিদের বাড়ির তাক থেকে মেডেল তুলে ভাসানোর জন্য ব্যাগে ভরতে দেখা গিয়েছিল। গঙ্গার ঘাটে সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।

তারপর অবশ্য বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন কৃষক নেতা নরেশ টিকায়েত। তাঁর অনুরোধেই এদিন মেডেল ভাসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন কুস্তিগিররা। মোদী সরকারকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঁচ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। জানিয়েছেন, এর মধ্যে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এবার সত্যিই পদকগুলি গঙ্গায় বিসর্জন দেবেন তাঁরা।

"যৌন হেনস্থার ঘটনার প্রতিবাদ করে এবং সুবিচার চেয়ে কুস্তিগিররা কি কোনও অপরাধ করেছেন? পুলিশ এবং সিস্টেম আমাদের সঙ্গে অপরাধীদের মতো ব্যবহার করছে। যেখানে অভিযুক্ত নিজে খোলামেলাভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকী সে পকসো আইন পাল্টে দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করছে," দাবি প্রতিবাদীদের।

‘পদক ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা আমাদের কাছে মৃত্যুর সমান। কিন্তু আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়েই বা কীভাবে বাঁচব আমরা? আমাদের আর মেডেল চাই না। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে গলা তুললে ওরা আমাদের জেলে ঢোকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে," জানিয়েছেন তাঁরা।

XS
SM
MD
LG