অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে যৌন হেনস্থার অভিযোগে আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের সঙ্গে বৈঠক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর


ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশেষে ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীরদের করা যৌন হেনস্থা কান্ডে হস্তক্ষেপ করলেন। প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের প্রধান দুই মুখ সাক্ষী মালিক ও বজরং পুনিয়ার বৈঠক হয়েছে অমিত শাহের সঙ্গে। সংবাদ সূত্রের খবর, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট পেশ করার জন্য পুলিশকে বলা হবে।

পুনিয়া ও মালিকের সঙ্গে শাহের বৈঠকটি হয় গত শনিবার ৩রা জুন বেশি রাতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে। দু’ঘণ্টা ধরে আলোচনা চলে। দুই কুস্তিগির শাহকে কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগগুলি এক-দুই-তিন করে তুলে ধরেন। কীভাবে যৌন হয়রানি করেছেন ব্রিজভূষণ তার বিশদ বর্ণনা দেন।

সংবাদ সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীদের তরফে সাক্ষী ও বজরং দিল্লি পুলিশের তদন্ত নিয়েই সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন। তদন্তের অগ্রগতি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন। তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, পুলিশের কাছে অনেকেই অভিযোগের সপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চান তাঁরা।

প্রসঙ্গত, এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকারের নীরবতার প্রতিবাদে এর আগে প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা হরিদ্বারের গঙ্গায় মেডেল ভাসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কৃষক নেতা মহেন্দ্র সিং টিকায়েতের হস্তক্ষেপে সেই কর্মসূচি স্থগিত রেখে সরকারকে পাঁচদিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সময়সীমা পেরনোর আগেই শাহ ডেকে নেন সাক্ষীদের।

শনিবার বৈঠক হলেও কোনও পক্ষই এই ব্যাপারে রবিবার পর্যন্ত মুখ খোলেনি। সোমবার ৫ জুন পুনিয়া বৈঠকের কথা জানিয়ে বলেন, আমরা অপেক্ষা করব।

সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্নে আইনি পথকেই আশ্রয় করেছেন। তিনি শুধু কথা দিয়েছেন, নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পুলিশ চার্জশিট দেবে। প্রসঙ্গত, যে সাতজন ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁদের মধ্যে একজন নাবালিকা কুস্তিগিরও আছেন। অভিযোগ দায়ের করেছেন নাবালিকার বাবা। নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে পকসো (প্রোটেকশন অফ চাইল্ড ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইনে মামলা হয়েছে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। ওই আইনে তিন মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করার কথা।

এদিকে, ব্রিজভূষণ অযোধ্যায় সাধুদের নিয়ে তাঁর সোমবারের সমাবেশ বাতিল করলেও তাঁর নিজের সংসদীয় কেন্দ্রে আগামী ১২ জুন সভা করবেন এবং সেটা হবে দলের উদ্যোগেই। মোদী সরকারের নয় বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিজেপির মহা-জনসম্পর্ক অভিযানের অংশ হিসাবে নিজের সংসদীয় কেন্দ্রের ওই সভায় শক্তি পরীক্ষার আয়োজন করছেন ব্রিজভূষণ।

যদিও বিজেপির একাংশ মনে করছে, তাঁর বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ কুস্তিগিরেরা করেছে তাতে দলের উচিৎ ব্রিজভূষণের থেকে দূরত্ব তৈরি করা। লক্ষণীয়, দলগতভাবে বিজেপি গোড়া থেকেই এই ব্যাপারে নীরব। ব্রিজভূষণের পক্ষে না দাঁড়ালেও ব্যবস্থা নেওয়া নিয়েও রা কাড়েনি দল। গোটাটাই পুলিশি তদন্তের উপর ছেড়ে রাখা হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশে পুরভোটের প্রচারে ব্রিজভূষণকে প্রচারের সামনের সারিতে রাখেনি দল। বিজেপি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের আপত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞদের মত দল সরাসরি পাশে না দাঁড়ানোয় ব্রিজভূষণ অযোধ্যার সাধুদের পাশে পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন যাতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে দল তাঁর টিকিট বাতিল না করে এবং সাধু সমাজকে পাশে রেখে ফের ভোটে জিততে পারেন। কিন্তু পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যস্ততার কথা বলে যোগীর পুলিশ অনুমতি দেয়নি।

XS
SM
MD
LG