চলতি আর্থিক বছরে ভারতে ১০০ দিনের প্রকল্প খাতে মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে মোদী সরকার। যা গত অর্থ বছরের বরাদ্দের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম। অর্থাৎ যে প্রকল্পে মানুষ বেশি কাজ চাইছে, সেই খাতেই বেশি টাকা রাখেনি সরকার। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পরিসংখ্যান গ্রামীণ অর্থনীতির ভয়াবহতাকেই চোখে আঙুল দেখাচ্ছে।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের পর লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী তাঁর প্রথম বক্তৃতায় একশ দিনের কাজ (প্রকল্প) নিয়ে কংগ্রেসকে তীব্র খোঁচা দিয়ে বলেছিলেন, “গত ষাট বছরে কংগ্রেস গরিবদের জন্য একটাই কাজ করেছে। মাসের কটা দিন গর্ত খোঁড়ার কাজ দিয়েছে তাদের। আমি ঢাক ঢোল পিটিয়ে এই স্মারককে ধরে রাখব।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ন' বছর পর দেখা যাচ্ছে, দেশের ৩ কোটি পরিবার সেই একশ দিনের কাজের জন্য আবেদন করে বসে আছে। এর অর্থ গ্রামে আর কোনও কাজ নেই। একশ দিনের কাজই ভরসা। মে মাসে ৩ কোটি ১৭ লক্ষ পরিবার তাই একশ দিনের প্রকল্পের আওতায় কাজ চেয়েছে।
পর্যবেক্ষরা মনে করছেন, 'গর্ত খোঁড়ার কাজ' বলে যে রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্পর সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, সেই তিনি তথা তাঁর সরকার বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। পর পর দুটি মেয়াদ সরকারে থেকেও গ্রামীণ অর্থব্যবস্থায় কোনও বদল আনতে পারেনি মোদী সরকার।
অর্থনীতিবিদদের মতে, গ্রামের মানুষের কাজ না থাকলে ক্রয় ক্ষমতা থাকবে না। ফলে গ্রামীণ চাহিদাও থাকবে না। সামগ্রিক ভাবে তা অর্থনিীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এপ্রিল মাসে ২ কোটি ৪০ লক্ষ পরিবার কাজ চেয়েছিল। মে মাসে তা আরও ৭০ লক্ষ বেড়ে গিয়েছে। ২০০৬ সাল থেকেই দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল-মে মাসে একশ দিনের কাজে বেশি আবেদন জমা পড়ে। কারণ রবি-ফসল উঠে যাওয়ার পর ঠিকা মজুরদের হাতে তখন কাজ থাকে না। কিন্তু কাজের চাহিদা এই স্তরে পৌঁছে যাওয়াটা অশনিসংকেত বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
মঙ্গলবার এ নিয়ে বর্তমান কেন্দ্র সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। তাঁর কথায়, "আর হেডলাইন ম্যানেজ করে চলবে না। জিএসটি আদায়ে বৃদ্ধি, দেশের মোট উৎপাদনে বৃদ্ধির মতো পরিসংখ্যান দিয়ে এই দুর্দশার ছবি আড়াল করা যাবে না। শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকা যাবে না।"
গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থার এই ভয়ঙ্কর ছবিকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কুড়ি বছর আগের সঙ্গে মেলাতে চাইছেন। সেই সময়ে বাজপেয়ী সরকার 'শাইনিং ইন্ডিয়া'র স্লোগান তুলেছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে তামাম সমীক্ষা জানিয়েছিল দুই তৃতীয়াংশ আসনে জিতে ক্ষমতায় আসবে এনডিএ। দেখা যায়, গ্রামে বিজেপির জনভিত্তিতে ধস নেমেছে। শাইনিং ইন্ডিয়া গ্রামের অন্ধকারকে মুছতে পারেনি। মঙ্গলবার যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে তা তাই পুরনো ছবিকে প্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।