উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে দুই জনজাতির মধ্যে চলতে থাকা হিংসায় কিছুতেই লাগাম দেওয়া যাচ্ছে না। শুক্রবার ৯ জুন দুপুরে চুড়াইচাঁদপুর জেলায় ফের হিংসার বলি হয়েছেন তিনজন। তিনজনই কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ বলে জানা গিয়েছে। নিহতদের একজন মহিলা। বাকি দু’জন মাঝবয়সি পুরুষ।
গত মাসের ৩ তারিখ থেকে উত্তর-পূর্বের এই পাহাড়ি রাজ্যে শুরু হওয়া অশান্তি কিছুতেই থামছে না। সরকারিভাবে মৃত্যু বেড়ে হল ১০৫। যদিও বহু মানুষ নিখোঁজ। মনে করা হচ্ছে নিখোঁজদের অনেকেই বেঁচে নেই। ৩ থেকে ৭ মে পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে নিহত অনেকের দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। অনেককে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। তাদের দেহের হদিশ নেই। অনেকেই পরিজনের খোঁজ চেয়ে থানায় মিসিং ডায়েরি করেছেন।
শুক্রবার সংঘর্ষের পর কুকি জনজাতিদের সংগঠন ইন্ডিজিনিয়াস ট্রাইবাল লিডার্স ফোরাম বলেছে, এলাকায় সেনা, আধা সেনা ও পুলিশের টহল চলছিল। যৌথ বাহিনীকে তল্লাশিতে সাহায্য করতেই স্থানীয় মানুষ গ্রামের এক প্রান্তে জড়ো হয়েছিলেন। তল্লাশি অভিযান শেষ হতেই একদল লোক এসে হামলা চালায়। হামলাকারীরা সামরিক পোশাক পরা ছিল বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। তারা দুটি মোটর সাইকেলে করে এসে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই দু’জন গ্রামবাসী নিহত হন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান আরও একজন।
বৃহস্পতিবার ৮ জুন রাতে বিজেপির এক বিধায়কের বাড়িতেও হামলা চলে। শাসক দলের বিধায়কের বাড়ি লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। তাতে বাড়ির একাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও বিধায়ক ও তাঁর পরিবারের কেউ আহত হননি। গত সপ্তাহে আক্রান্ত হয় এক কংগ্রেস বিধায়কের বাড়িও। তাঁর বাডিতে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত জনতা। বিধায়ক কোনওরকমে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে পালিয়ে বাঁচেন। তাঁর বাড়ির কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
সব মিলিয়ে চলতি সপ্তাহেই জাতি সংঘাতে প্রাণ গেল ১১ জনের। গত সোম ও মঙ্গলবার যথাক্রমে তিনজন ও পাঁচজন খুন হন হামলায়। এদিকে, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের শান্তি প্রস্তাব কুকি এবং মেইতেই, দুই সম্প্রদায়ই অগ্রাহ্য করায় মণিপুরের পরিণতি নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। প্রশাসনের সামনে এখন একটাই চ্যালেঞ্জ কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় জ্বালানি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়।