অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বোরোর বাম্পার ফলন—দামে খুশি কৃষক


ঠাকুরগাঁওয়ে বোরোর বাম্পার ফলন
ঠাকুরগাঁওয়ে বোরোর বাম্পার ফলন

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়ায় প্রতিকূলতার কারণে গত মৌসুমে বোরোতে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হয়েছিল কৃষকদের। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো এবং গত মৌসুমের তুলনায় এই মৌসুমে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পেরে জেলার কৃষকেরাও খুশি।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তেমন বড় কোনো ঝড়-বৃষ্টি ও দুর্যোগ না হওয়ায় ধানের ফলন গত বছরের তুলনায় এবার একর প্রতি ৫-১০ মণ করে বেশি হয়েছে।

কারও কারও বিঘায় ৬০-৬৫ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। আর বর্তমানে ৮০ কেজির এক বস্তা কাঁচা ধান ১ হাজার ৮০০ থেকে প্রায় ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এক বিঘা জমিতে তাদের খরচ হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা। আর বিক্রি করছেন ৪৫ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তাই এবার তারা ফলন ও দামে সন্তুষ্ট।

মাঠেই ধান মাড়াই করে আবার মাঠেই ধান বিক্রি করছিলেন সদর উপজেলার রহিমানপুর দাসপাড়া গ্রামের কৃষক গোবিন্দ রায়।

তিনি বলেন, এবার আমাদের ৫০ শতকের এক বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ৫০ মণ করে। আর প্রতি মণ ধান বিক্রি করলাম ৯২৫ টাকা করে। তাতে এক বিঘা জমির ধানের মূল্য পেয়েছি ৪৬ হাজার টাকার ওপরে। ধান চাষ করতে এক বিঘা জমিতে সর্বমোট খরচ হয়েছে প্রায় ২০-২২ হাজার টাকা। এতে লাভ থাকছে প্রায় ২৪-২৫ হাজার টাকা।

কৃষক মহিদুল বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের দাম ও ফলন দুটোই ভালো পেয়েছি। গতবারে ধান বিক্রি করেছিলাম ১ হাজার ৬০০ টাকা বস্তা।

তিনি আরও বলেন, “এবার প্রথম দিকে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা ধানের বস্তার দাম ছিল। এখন একটু কমে গেছে। আমার এক বিঘা জমিতে ২৯ জাতের ধান ৪৮ মণ করে ফলন হয়েছে। তাই ফলনে এবার বেশ লাভ করেছি”।

ব্যবসায়ী আক্তারুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ধানের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কাঁচা ধানের বস্তা ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা দরে ক্রয় করছি।

তিনি আরও বলেন, পরে দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, জেলায় এবার বোরো মৌসুমে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার ৬১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে।

এর মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৬ টন করে ফলন হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে বর্তমান বাজারের ৯০০ টাকা প্রতি মণ দর অনুযায়ী জেলা থেকে এবার ৬০২ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার ধান উৎপাদন হবে শুধু বোরো মৌসুমেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রণোদনার আওতায় জেলার কৃষকদের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এবার বোরো মৌসুমে হাইব্রিড ধানে ১৫ হাজার কৃষককে ও উপশী জাতের ধানে ১০ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এর পাশাপাশি ধান চাষে সকল কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকিমূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, এর ফলে কৃষকেরা দ্রুত সময়ে ফসল রোপণ ও কর্তন করতে পারছেন এবং খরচের দিক থেকেও তারা লাভবান হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, এবার কর্তনকৃত বোরো ধান প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৬ টন করে ফলন হয়েছে। তাই আশা করছি ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।

XS
SM
MD
LG