অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠছাড়া করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার—মির্জা ফখরুল


সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আগামী নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মাঠ ছাড়তে বাধ্য করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। আবার পুরানো মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত হওয়াও বিস্ময়কর। আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিরও চেষ্টা চলছে”।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সরকার নানা কৌশলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, “নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বিএনপিকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে নির্মূল করা হচ্ছে। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে মামলায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কোনো (বিরোধী) প্রার্থী না থাকলে তারা (আওয়ামী লীগ) তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। তাদের লক্ষ্য ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন করে ভোট না দিয়ে আবার ক্ষমতা দখল করা”।

তিনি দাবি করেন, নরসিংদীতে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সরকার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তাঁর স্ত্রী শিরিন সুলতানাসহ ৫০ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।… খোকনের স্থানীয় বাসা ও নরসিংদী বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। “এটি একটি সাধারণ ঘটনা নয়, কিছু সন্ত্রাসী ও সরকারের আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর প্রত্যক্ষ যোগসাজশ ও সহায়তায় হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তীতে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালানো হয়েছে”।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, বুধবার চট্টগ্রামে যুব সমাবেশে যাওয়ার পথে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলায় চালায়। … বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য ছাত্রলীগের কর্মীরা বন্দরনগরীর কয়েকটি স্থাপনাও ভাঙচুর করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় যুবদলের ৫ জনকে আটক করেছে। আমরা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে আটকদের মুক্তি দাবি করছি”।

আরেকটি সাজানো নির্বাচন করতে সরকার পুলিশ ও জনপ্রশাসনে রদবদল শুরু করেছে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে ভোট কারচুপির মাধ্যমে আরেকটি সাজানো নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে পুলিশ ও জনপ্রশাসনে রদবদল শুরু করেছে। “তারা (আওয়ামী লীগ) ভোট কারচুপি এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ইচ্ছানুযায়ী আরেকটি নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পুলিশে ব্যাপক রদবদল ও পদোন্নতি নিয়ে কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন রয়েছে। তারা আগামী নির্বাচনের আগে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সবকিছু সাজানোর উদ্দেশ্য নিয়ে জনপ্রশাসনেও রদবদল করছে”।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে সংবাদপত্রের ‘কালো দিবস’ উপলক্ষে বিএনপিপন্থী প্ল্যাটফর্ম জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের ১৬ জুন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার চারটি পত্রিকা ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। একদল সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরে সংবাদপত্র বন্ধের এই দিনকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন। ওই দিনটি পালন উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফোরাম এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের জনগণ আগামী দিনে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের সব নীলনকশা নস্যাৎ করে দেবে। এইচ এম এরশাদসহ অনেক ফ্যাসিবাদী শাসক অতীতে একই কাজ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনরোষের মুখে তাদের ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চলমান আন্দোলন জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের আড়ালে একদলীয় বাকশাল শাসন কায়েম করেছে। “তারা আমাদের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাক ও লেখার স্বাধীনতা এবং সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা”। সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট্য হলো ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। “আমাদের সংগ্রাম শুরু হয়েছে এবং এটি এক বা দুই দিনে শেষ হবে না। আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, কারণ আমাদের প্রতিপক্ষ এতটাই স্বৈরতান্ত্রিক যে তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে মানুষকে হত্যা করতে এবং তাদের গুম করতে দ্বিধা করে না”। … গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে সব হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনতে শক্তিশালী আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে অপসারণ করতে হবে।

XS
SM
MD
LG