বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে যেতে দলটির সক্রিয় নেতাদের গোয়েন্দারা ‘হুমকি’ দিচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের যারা অ্যাকটিভ নেতা এবং ইলেকশন করেছেন বা করবেন … এই ধরনের নেতাদেরকে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে বলা হচ্ছে, যদি বিএনপি নির্বাচন না–ও করে, তোমরা নির্বাচন করবে”।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এই অভিযোগ করেন। বিএনপির মহানগর দক্ষিণ শাখার নেতা-কর্মীদের ওপর মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়েরের বিষয় নিয়ে কথা বলতে তিনি এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি আপনাদেরকে (গণমাধ্যম) আজকে প্রকাশ্যেই বললাম। আমাদের অনেক নেতা এই অভিযোগ করেছেন। আমরা কোন দেশে বাস করছি? একটা মধ্যযুগীয় বর্বর যুগে আমরা বাস করছি। এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন কোনো হেন কোনো অন্যায় নাই যে তারা করছে না”।
তারা দেশের ভূ-রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে
মির্জা ফখরুল বলেন, “কী রকম মরিয়া হয়ে গেছে যে, দেশের ক্ষতি করতেও তারা (আওয়ামী লীগ) দ্বিধা করছে না। জানে যে, এই দেশের যে অবস্থা … অন্য দেশ সম্পর্কে তারা যে কমেন্টস করছে, যে কথাগুলো বলছে, এটা আমাদের দেশের ভূ-রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি ইতিমধ্যে”।
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই ধরনের কথা-বার্তাগুলো কোনো দায়িত্বহীন নেতা বলতে পারেন, বিশেষ করে সরকার চালাচ্ছেন যিনি তিনি বলতে পারেন… এটা আমরা কল্পনা করতে পারি না। আমরা যারা সুস্থ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, আমরা মনে করি, তাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তারা পরিস্কার বুঝতে পেরেছেন এবং আগে থেকেই বুঝতে পেরেছেন যে, তাদেরকে জনগণ আর গ্রহণ করবে না। তাই কোনোভাবেই তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা শুনছেন না, একেবারে ওদিকে যাচ্ছেনই না”।
মির্জা ফখরুল বলেন, “তাদের একটাই কথা হচ্ছে যে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে সেই সংবিধান কে কাটাছেঁড়া করেছে? সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে তো অবশ্যই এয়োদশ সংশোধনীতে যে কেয়ারটেকার সরকার ছিল সেটাই থাকবে এবং সেটা থাকা উচিত। সেটা ছিল কনসেনসাসের ভিত্তিতে একটা রাজনৈতিক একটা সিদ্ধান্ত, একটা বন্দোবস্তো হয়েছিল সব দলগুলো মিলে। সেখান থেকে সরে গিয়ে নিজেরা বেমালুম একতরফাভাবে শুধু নিজেদের ক্ষমতায় রাখার জন্য তারা এ কাজগুলো করেছেন”।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আর এখন যখন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে, আবার একতরফা নির্বাচন করার জন্য, আবার ক্ষমতায় হাইব্রিড রেজিমের মতো চলে যাওয়ার জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। কিন্তু মানুষ তো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানুষ প্রতিবাদ করছে, মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। এবার সেটা মানুষ করতে দেবে না”।
প্রশাসনের প্রতি মির্জা ফখরুলের অনুরোধ
মির্জা ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রযন্ত্রের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, যারা আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত তাদের কর্মকর্তাদের আমরা অনুরোধ জানাতে চাই যে, দয়া করে সাংবিধানিক কাজের সঙ্গে নিজেদের জড়িত করবেন না এবং জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। এ দেশের মানুষ বরাবরই যেকেনো অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, যেকোনো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, যেকোনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। এখনো তারা অধিকার আদায় করে নেবে”।
মির্জা ফখরুল বলেন, “জনগণের যেটা আশা-আকাঙ্খা সেটা পুরণ করবার জন্যে আমরা আশা করব যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী যাদের দায়িত্বশীলতা শুধু জনগণে প্রতি, সেই জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতা পালন করবেন। এই ধরনের অন্যায়-বেআইনি নির্দেশের ফলে আপনারা এ ধরনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে ব্যাহত করবেন না। এটা সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা। জনগণ যেখানে তার অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে, তার সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেতে চাচ্ছে, সেই অধিকারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে এভাবে বাধাগ্রস্ত করা, গ্রেপ্তার করা, নির্যাতন করা নাগরিকদেরকে… এটা ভয়াবহভাবে রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল বলে আমরা মনে করি। দয়া করে এটা থেকে বিরত থাকুন, জনগণের সঙ্গে আসুন”।
সরকারের প্রতি মির্জা ফখরুলের দাবি
মির্জা ফখরুল বলেন, “এখনো সময় আছে আপনারা জনগনের ভাষা, জনগণের চাহিদা বুঝতে পেরে আপনারা পদত্যাগ করুন, একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এবং সংসদ বিলুপ্ত করে একটা নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায় কীভাবে করে নিতে হয় তারা তা জানে”।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই কাজটি এখন পুরোপুরিভাবে শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই আমাদের অ্যাকটিভ নেতাদের জেলে আটকিয়ে রাখা। এসব নেতাদের জামিন হচ্ছে উচ্চ আদালত থেকে। কিন্তু তাদেরকে আরেকটা মামলা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। একটা ভয়াবহ অবস্থা”।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বিএনপির মহানগর দক্ষিণ শাখার সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন স্তরের নেতা শেখ রবিউল আলম রবি, হারুনুর রশীদ হারুন, ওবায়দুর রহমান লিটন, আরিফুল ইসলাম আরিফসহ দক্ষিন শাখার গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মী এবং অঙ্গ সংগঠন যুব দলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, মহানগর শাখার সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর আলম, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিনসহ অন্যদের অবিলম্বে মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিএনপির মহানগর দক্ষিণ শাখার আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, লিটন মাহমুদ, হাজী মো. মনির হোসেন, আনম সাইফুল ইসলাম, যুব দলের মহানগর দক্ষিন শাখার সাঈদ হাসান মিন্টু, খন্দকার এনামুল হক এনাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর দক্ষিন শাখার সাইদ মোরশেদ পাপ্পা, কৃষক দলের মহানগর দক্ষিন শাখার হাজী মো. কামাল হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন বাদশা ও ছাত্র দলের মহানগর পূর্ব শাখার মোহাম্মদ আল আমিন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।