বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে, জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জেলার ৯ উপজেলার নিম্নাঞ্চল; পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১২ হাজার পরিবার।
ভোগান্তি বেড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে আছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো।ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি তলিয়ে আছ ৫ দিনে ধরে।অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে নৌকায় অথবা উঁচু স্থানে অবস্থান করছেন। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন তারা।
জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার পূর্ব বালাডোবা, কালির আলগা, মুসারচর ও সদরের পোড়ার চরসহ ১০টি চরে বসবাসকারী দুই শতাধিক পরিবার ঘর বাড়ি ছেড়ে নৌকায় এবং উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের কাজ নেই, খাবার নেই, আর নলকুপ তলিয়ে থাকায় রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
অন্যদিকে, নদ-নদীর অববাহিকার গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার প্রায় ১০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল জল-নিমজ্জিত হয়েছে। চারণভূমি তলিয়ে থাকায়, চরাঞ্চলের গবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষ।
তাবে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে যে জেলার সবকটি নদ-নদীতে পানি এখনো বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুর ১২টায় দেয়া তথ্যমতে, জেলার পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
এছাড়া, কুড়িগ্রাম সদরের ধরলার সেতু পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৮৯ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পুর্ববালাডোবার চরের আব্দুর রহমান জানান, এই চরে ৪৯টি পরিবারের বসবাস। চরটি নতুন এবং নিচু হওয়ায় এখানকার বেশির ভাগ ঘর বাড়িতে কোমর সমান পানি উঠেছে। অনেকেই ঘর বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গা চলে গেছেন অথবা নৌকায় বসবাস করছেন। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় ঠিকমত পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
পাঁচগাছী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার মমিন জানান, বাড়ির চারিদিকে পানি। সব সবজিখেত পানির নিচে। এবারের বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে অনেক।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, “কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি আর বাড়ছে না। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয়, তবে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, “বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নগদ অর্থ ও শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। যেখানে যখন প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।”