অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট-এর বক্তব্য ঘিরে ভারতের অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বিতর্কিত ট্যুইট


উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ঘরছাড়া ৫ লক্ষ মানুষ, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-এর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে। তার মাঝেই একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, "বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসলে, সংখ্যাগুরু হিন্দু দেশ ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে কথা বলা উচিত। আমি মোদীকে ভাল চিনি। আমার যদি ওঁর সঙ্গে কথা হত, তাহলে আলোচনার অন্যতম বিষয় হত ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার ও সুরক্ষা। কারণ, প্রবল আশঙ্কা রয়েছে যে ভারত ভেঙে টুকরো টুকরো হতে পারে।"

বৃহস্পতিবার ২২ জুন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই সাক্ষাৎকার সামনে আসতেই ভারতে আলোড়ন তৈরি হয়। বিরোধীরা যেমন সেই সাক্ষাৎকারকে হাতিয়ার করে বিজেপির তীব্র সমালোচনায় নামে, তেমনই বিজেপি শিবিরও ওবামার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। এমনকী এমনও শোনা যায়, ওবামার নামে গুয়াহাটিতে নাকি এফআইআর দায়ের হয়েছে।

রোহিণী সিং নামে এক সাংবাদিক ট্যুইট করে প্রশ্ন তোলেন, ‘ওবামার বিরুদ্ধে কি গুয়াহাটিতে এফআইআর দায়ের হয়েছে? অসম পুলিশ কি ওবামাকে গ্রেফতার করতে ওয়াশিংটন যাচ্ছে?’

সাংবাদিকের ট্যুইট-এর জবাব দিতে গিয়ে হিমন্ত বলেন, "ভারতে অনেক হোসেন ওবামা রয়েছেন। ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে, তাঁদের যত্ন নেওয়াই আমাদের প্রথম কাজ। অসম পুলিশ প্রাধান্যের বিচারে কাজ করে।" এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়া নেটিজেনরা তাঁর তীব্র সমালোচনা শুরু করেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সন্দেহ নেই হিমন্তের নিশানা কাদের দিকে। বা তিনি কী ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন। তাঁদের মতে, অসমের সংখ্যালঘু তথা মুসলিমদের ব্যাপারে হিমন্ত যে ‘আগ্রাসী’ সেই নমুনা কম নেই। মাদ্রাসা নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত থেকে স্কুল শিক্ষার সিলেবাস থেকে মুঘল আমলকে ছেঁটে ফেলা—হিমন্ত এগিয়েছেন বেপরোয়া ভঙ্গিতে। ফলে ‘এদেশের অনেক হোসেন ওবামা’ বলে আসলে তিনি মুসলমান সম্প্রদায়কেই বিঁধতে চেয়েছেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

উল্লেখ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও তাদের সমীক্ষায় বলেছে, মোদী জমানায় ভারতে মুসলিমরা বিপন্ন। যার অভিঘাত সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।

মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবার মন্তব্য আন্তর্জাতিক স্তরেও ভারতের পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের। তাঁরা বলছেন সম্ভবত সেই কারণেই প্রশ্নোত্তর পর্বে মোদী

যুক্তরাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে বলার চেষ্টা করেছেন, "ভারতে সংখ্যালঘুরা সুরক্ষিত। গণতন্ত্র ভারতের ডিএনএ-তে বইছে।"

ওয়াশিংটনে মোদী-বাইডেনের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ওবামার সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেখানে মোদী বলেন, "ভারতে কোনও ভেদাভেদ নেই।" তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকার সংবিধান অনুসরণ করে। সেখানে জাতি, বর্ণ, ধর্মের কোনও ভেদ নেই। সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস—এটাই সরকারের মূলমন্ত্র।

মোদীর এই মন্তব্যের পরেই বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ‘হোসেন ওবামা’ বলে ট্যুইট করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের বক্তব্য, "এই ওবামাকে নিয়ে এসেই ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি কত আদিখ্যেতা করেছিলেন মোদী। আর যেই তিনি এখন মৌলিক প্রশ্নটি তুলে দিয়েছেন, ওমনি তিনি হোসেন ওবামা হয়ে গেলেন। এই হল বিজেপির চরিত্র। আসলে ওদের ডিএনএ-তে ভেদাভেদ ছাড়া কিচ্ছু নেই।"

XS
SM
MD
LG