ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে চান এই বক্তব্যের পর এ নিয়ে সরকারি স্তরে তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছে। সংবাদ সূত্রের খবর, সংসদের আসন্ন বর্ষাকালীন অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত বিল পেশ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হতে পারে বলে আপাতত খবর।
গত রবিরার ২৫ জুন মধ্য প্রদেশের ভোপালের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে জোরদার সওয়াল করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, "এক দেশে একাধিক আইন কি থাকতে পারে? এই প্রশ্নের উল্লেখ রেখেই সংবিধান কার্যকর করা হয়েছিল। এখন সময় এসেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার।"
১৯৮০ সালে ভারতে অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানীদের উদ্যোগে জন্ম নেয় নতুন দল ভারতীয় জনতা পাটি। পুরনো জনসংঘের নেতা-কর্মীরাই ছিলেন নয়া দলের শক্তি। জনসংঘের সংকল্পই প্রতিফলিত হয় নতুন দলের ঘোষণাপত্রে। তাতে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার সাংবিধানিক বিধান ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের কথাও বলা হয়। পরবর্তীকালে বিজেপির ঘোষণায় যুক্ত হয় অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ কর্মসূচি।
রামমন্দির ও ৩৭০ ধারা সংক্রান্ত ঘোষণা বাস্তবায়নের পর মোদী অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরে অগ্রসর হয়েছেন। এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার ২৯ জুন আইনমন্ত্রক ও আইন কমিশনের কর্তাদের বৈঠক হয়েছে। আগের আইন কমিশন জানিয়েছিল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার মতো পরিস্থিতি দেশে তৈরি হয়নি। কিন্তু বর্তমান কমিশন নতুন করে জনমত গ্রহণের কাজ শুরু করেছে। সেই মতো আইন কমিশনের কাছে নিজেদের বক্তব্য জানাতে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন।
আসলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে দেশে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা ও জাতি গোষ্ঠীর জন্য পৃথক ব্যক্তিগত আইন আর থাকবে না। বর্তমানে পারসোন্যাল ল' বা ব্যক্তিগত আইনের বিধানে দেশের বিচার বিভাগও মান্যতা দিয়ে থাকে। যেমন সরকারিভাবে বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা থাকলেও মুসলিম, খ্রিস্টান এবং আদিবাসীদের বেশ কিছু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক বিধান অনুসরণের সুযোগ আছে। দত্তক নেওয়া, সম্পত্তির অধিকার, একাধিক বিয়ে ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ভিন্ন বিধান চালু আছে।
মোদী সরকার ইতিমধ্যে তিন তালাক ব্যবস্থাকে আইন করে নিষিদ্ধ করেছে। তার আগে সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক ব্যবস্থাকে অমানবিক, অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার সাংবিধানিক বিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বিলোপও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের আর একটি পদক্ষেপ ছিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
সংবাদ সূত্রের খবর, আইন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আইনমন্ত্রক অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিলের খসড়া বর্ষাকালীন অধিবেশনে পেশ করবে। সংসদে পেশ করেই সেটি পাশ করানোর চেষ্টা হবে না। কারণ, লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও রাজ্যসভায় নেই। নভেম্বরে চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যসভার সংখ্যার ভারসাম্য বিজেপির অনুকূলে এলে তখন দুই কক্ষেই বিলটি পাশ করিয়ে আইনে পরিণত করা হবে। ততদিন বিলটি সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে জমা থাকবে। কমিটি জনমত সংগ্রহ করে প্রয়োজনে বিলে সংশোধনীর সুপারিশ করতে পারবে।