জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বক্তারা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এসডিজি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছে জাতিসংঘ। এর আগে, শনিবার (১ জুলাই) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। এই সেমিনারে বক্তারা এমন আহ্বান জানান।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন; বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব আমিনা জে মোহাম্মদ। তারা বর্ধিত অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং ১০ হাজার কোটি ডলার তহবিলের প্রতিশ্রুতিতে অবদান রাখতে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল, এসডিজির প্যারিস চুক্তি এবং বর্ধিত অর্থায়ন, প্রযুক্তি বিনিময় ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ন্যায্য রূপান্তরে আন্তর্জাতিক সংহতির জন্য, বৈশ্বিক পুনঃপ্রতিশ্রুতি’র ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, “লবণাক্ততা অনুপ্রবেশ ও জলাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর ৬ লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত ও চাকরি হারাচ্ছে। তারা এই ধরনের বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে ধনী দেশগুলোর ত্রুটির কারণে; যে দেশগুলো বিপুল গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গত করে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা সৃষ্টি করে।”
তিনি বলেন, “কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান মাত্র দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন। তাই অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মতো বাংলাদেশও চায় ধনী দেশগুলোর বোঝা ভাগাভাগি করুক।”
এসডিজির ১৭ লক্ষ্য অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলো এসডিজি অর্জনের জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি দেবে। উন্নত দেশগুলো তাদের জিডিপির দশমিক ৭ শতাংশ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; কিন্তু, মাত্র ছয়টি দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, “অর্থ ও প্রযুক্তি ছাড়া এসডিজি আদৌ অর্জন করা সম্ভব নয়।”
জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব আমিনা জে মোহাম্মদ বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত এবং শরণার্থী সংকট এসডিজিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্য ব্যবস্থার উন্নতি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভালো উদাহরণ তৈরি করেছে। কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।”
তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সবুজ প্রযুক্তিতে রূপান্তর, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রচুর বিনিয়োগের ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল বিশ্বজুড়ে তার অ্যাডভোকেসি কাজের অংশ হিসেবে, সেমিনারের সম্মিলিত বার্তাগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবেন।তিনি বলেন, “এসডিজি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান এবং প্রযুক্তি গুলোকে উন্মুক্ত করার পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমতকে একত্রিত করতে আমরা আপনাদের ওপর নির্ভর করছি।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “বাংলাদেশের মতো দেশ প্রমাণ করেছে যে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সংলাপের জন্য একটি সক্ষম পরিবেশের মাধ্যমে আরো অনেক দূর যেতে পারে।”
সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন; প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আখতার হোসেন, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মাহবুবা নাসরীন, ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস) শামীমা আক্তার এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।