জি-২০ ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে এসসিও-র পরিচালনভার এখন ভারতের হাতে। এই জোটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্রগুলি হল ভারত, পাকিস্তান, চীন এবং রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে তৈরি দেশগুলি। গত মে মাসে ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত হয় এসসিও-র বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। সেই বৈঠকের সুবাদে ১২ বছর পর পাকিস্তানের কোনও মন্ত্রী ভারতের মাটিতে পা রাখেন। গোয়ার বৈঠকে যোগ দেন পাক বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো।
এবার চলতি মাসের শুরুতে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকটির আয়োজন করা হয়েছিল ভার্চুয়াল ব্যবস্থায়। সদস্য দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের সকলের যোগদান নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা করা হয়। এসসিও মূলত সদস্য দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক বোঝাপড়া মজবুত করার লক্ষ্যে কাজ করে। সেখানে আঞ্চলিক পরিকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবারের বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে দেন, সন্ত্রাসকে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বোঝাপড়া গড়ে তোলা কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমন্ত্রণে এই ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ পর্যায়ের সেই বৈঠকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এই ব্যাপারে কোনও দ্বিচারিতা চলতে পারে না। কথায় ও কাজে মিল থাকা জরুরি।"
তবে পরিকাঠামো নিয়েও বৈঠকে চীনকে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত। সম্মেলনে ঘোষণায় চীন তাঁদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভস’ (বিআরআই) প্রকল্পের উল্লেখ রাখতে চায়। কিন্তু ভারত তাতে সায় দেয়নি। গত বছর সমরখন্দের সম্মেলনেও চীনের ওই প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করেছিল ভারত।
বিআরআই হল চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র নেওয়া পরিকাঠামো উন্নয়নের এক স্বপ্ন প্রকল্প। বিশ্বের ১৫৬টি দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে শি এই প্রকল্প হাতে নেন। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চীন নতুন বন্দর, হাইওয়ে, বিমানবন্দর তৈরি করছে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে যা ভারতের বাণিজ্যিক ও সামরিক স্বার্থের পক্ষে বিপজ্জনক।
মঙ্গলবার ৪ জুলাই বেশি রাতে সম্মেলন থেকে জারি করা যৌথ প্রস্তাবে 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভস'-এর উল্লেখ থাকায় ভারত তাতে স্বাক্ষর করেনি। প্রস্তাবে বলা হয়, "এই সম্মেলন চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের প্রতি সমর্থন পুনঃনিশ্চিত করেছে।" প্রসঙ্গত, চীনের সহায়তায় কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এই প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়িত করছে।
চীনের প্রেসিডেন্টের এই প্রকল্পের বিরোধিতাই শুধু নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর এসসিও সম্মেলনের ভাষণে সন্ত্রাসকে অন্যতম এজেন্ডা করে তোলাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এসসিও সম্মেলনের মঞ্চে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হন। নাম না করে বলেন, "সন্ত্রাসের মোকাবিলায় সবচেয়ে আগে প্রয়োজন দ্বিচারিতা বন্ধ করা।"