দশ বছর আগে ভারতে ক্ষমতায় আসার আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্লোগান তুলেছিলেন, ‘আচ্ছে দিন আয়েগা’। এখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন, "এখন দেশের অমৃতকাল চলছে।" কিন্তু বাস্তবে গত ১০ বছরে দেশে কাজের সুযোগ কমেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রামে। সেখানে বেকারত্বের হার গত দু’বছরের মধ্যে এখন সর্বাধিক।
ক্ষমতায় আসার আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে তাঁর সরকার। সেই প্রতিশ্রুতি অধরা থেকে গিয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে এই নিয়ে তৃতীয়বার দেশে বেকারত্বের হার আট শতাংশের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেল। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই)-র সমীক্ষায় এমনই হতাশাজনক পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
এই সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশের শ্রমবাজার ক্রমাগত সঙ্কুচিত হচ্ছে। সিএমআইই-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, জুন মাসে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৮.৪৫ শতাংশ। এর আগের মাসে অর্থাৎ মে মাসে এই হার ছিল ৭.৬৮ শতাংশ।
গ্রামীণ ভারতের ছবিটা আরও খারাপ। তাদের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গ্রামে বেকারত্বের হার ৮.৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৯ শতাংশ। প্রতি একশ জনের মধ্যে ৯ জনের হাতে কোনও কাজ নেই। এতটা দুর্দশা কোভিডের সময়েও ছিল না। গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে মন্দের ভাল। মে মাসে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার ছিল ৭.৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ একশ জনের মধ্যে ৮ জনের হাতে কাজ ছিল না।
ভারতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ অধিকাংশই কৃষি নির্ভর। তাদের আয়ের মূল উৎস হল কৃষি। মে মাসের শেষে ফসল কাটা হয়েছে। আবার বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বীজ বোনার তোড়জোড় শুরু হয় জুলাইয়ে। এই ফসল কাটা ও নতুন শস্য বপনের মধ্যে কৃষি-কাজের সুযোগ কম থাকে। কিন্তু তা যেমন ঠিক, তেমন বিকল্প কাজের সুযোগও তৈরি হয়। এ সব কথা ভেবেই ইউপিএ জমানায় একশ দিনের কাজ প্রকল্প শুরু হয়েছিল। যাতে কৃষি মজুররা এই সময়ে অন্য কাজ পান সরকারের থেকে।
কিন্তু চলতি আর্থিক বছরের বাজেটে একশ দিনের কাজ প্রকল্পে বরাদ্দ ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। তার ফলে প্রকৃত যারা কাজ প্রার্থী তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে ১০ লক্ষ চাকরির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার রোজগার মেলার আয়োজন করছে। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে বস্তুত সারা দেশই কাজের অভাবে বিপর্যস্ত।