বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে না বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখে।” শনিবার (৮ জুলাই) ‘ ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) টক’-এ বক্তৃতাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এ কথা বলেন। ডিক্যাব ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমি-তে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, “কেউ কেউ বলে আমরা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছি। আপাতদৃষ্টিতে, জোর করে বলা হচ্ছে। আসলে, আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখি। আমরা কারো প্রতি ঝুঁকে পড়িনি।” তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি স্মরণ করেন; “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়।”
আব্দুল মোমেন বলেন, “বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়ন ও জনকল্যাণ এবং সরকার সেই লক্ষ্যেই মনোযোগ দিচ্ছে। আর, বাংলাদেশ কখনই তথাকথিত ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ পড়বে না।” তিনি বলেন, “এটি একটি ভুল ধারণা। কোনো কোনো পণ্ডিত এ কথা বলেন। অনেকে এটা গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান। কোনো অবস্থাতেই আমরা 'চীনা ঋণের ফাঁদে' পড়বো না।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কিছু লোক এই ভুল ধারণা পোষণ করেছে যে শ্রীলঙ্কার পর বাংলাদেশও ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ পড়বে। আমরা খুব বিচক্ষণ। বৈদেশিক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুবই সতর্ক থাকি। আমরা অপ্রয়োজনীয় ঋণ নেই না।”
তিনি বলেন যে আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি তার ঋণের ৫৫ শতাংশের বেশি একটি দেশ থেকে নেয়, তাহলে ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়ার ঝুঁকি থাকে। ড. মোমেন বলেন, “আমাদের সামগ্রিক ঋণ জিডিপির মাত্র ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ নেয়া হয়েছে এডিবি, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে। একক দেশ হিসেবে জাপান ১৭ শতাংশ, অর্থাৎ সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানকারী দেশ।”
আব্দুল মোমেন দাবি করেন যে চীন থেকে বাংলাদেশ ৩৫০ কোটি ডলার নিয়েছে, যা মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘ইস্পাত-কঠিন’ বলে বর্ণনা করেন তিনি। বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের একটি সোনালী অধ্যায়ে আছি। এটি একটি ইস্পাত-কঠিন সম্পর্ক।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “আমেরিকা, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়। তারা একের পর এক প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে। এটা ভালো। সব দেশের সঙ্গে আমাদের সু-সম্পর্ক রয়েছে। তাই জাতিসংঘের যে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আমরা জয়ী হই। সব দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।”
বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক সম্পর্কে মোমেন বলেন, ভূ-কৌশলগত ভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, “চীন একটি উদীয়মান তারকা এবং বাংলাদেশ চায়, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবার জন্য উন্মুক্ত, মুক্ত, নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিয়ম-ভিত্তিক নৌচলাচল ব্যবস্থা থাকুক।”
আব্দুল মোমেন আরো বলেন, “ভারত ও জাপানের মতো দেশগুলো এটাই দেখতে চায়। আমরা আমাদের নীতিতে 'অন্তর্ভুক্তি' যুক্ত করেছি, কারণ আমরা সব দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে চাই।”