মঙ্গলবার ১৮ জুলাই ভারতের কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে যখন ২৬টি বিরোধী দলের বৈঠক বসেছে আগামী ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে, তখন সেই দিনই এক সরকারি অনুষ্ঠান থেকে তাঁদের উদ্দেশে তীব্র কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “চব্বিশের নির্বাচনে সুশাসনের পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য মানুষ মনস্থির করে ফেলেছে। অথচ দেশের দুর্দশার জন্য যাঁরা দায়ী তাঁরা এখন নতুন দোকান খুলে বসেছেন।” এরপরেই বিরোধী জোটের বৈঠককে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এঁদের দেখে একটা অউধি কবিতা মনে পড়ছে— এঁদের লেভেল এক রকম আর প্রোডাক্ট অন্যরকম। এঁরা দেশকে একটাই প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, তা হল লাগামহীন দুর্নীতি।”
বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের যে বৈঠক বসেছিল তাতে সর্বভারতীয় দল হিসাবে ছিল কংগ্রেস ও সিপিএম। বাকিরা মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক আঞ্চলিক দল। যেমন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস বা স্তালিনের ডিএমকে কিংবা শরদ পাওয়ারের এনসিপি, মেহবুবা মুফতির পিডিপি, লালু প্রসাদের আরজেডি ইত্যাদি। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ এই সবকটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী জমানায় এই দলগুলির কোনও না কোনও নেতার বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইয়ে তদন্ত চলছে।
মঙ্গলবার সেই বিষয় নিয়েই বিরোধীদের প্রতি টিপ্পনি করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “গণতন্ত্রের মূল কথা হল, অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। কিন্তু এঁদের সবটাই তাঁদের পরিবারের জন্য। না খাতা না বহি, যো পরিবার কহে ওহি সহি। নিজের পরিবার বাঁচাও, পরিবারের জন্য দেশের সম্পত্তি লুঠ করে যাও।”
প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলতেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, “ভয় পেয়েছেন মোদী, গদি উল্টে যায় যদি!” তিনি আরও বলেন, “নরেন্দ্র মোদীও একটা পরিবার তৈরি করেছেন। যে পরিবারে কিছু মুনাফাভোগী শিল্পপতি রয়েছেন। যাঁরা এখান থেকে টাকা সরিয়ে বিদেশে ভুয়ো কোম্পানি খুলে তাতে সেই অর্থ রাখছেন। শুধু তা নয়, মোদীর পার্টির মধ্যেই তো পরিবারতন্ত্রের ছড়াছড়ি। রাজনাথ সিংয়ে ছেলে, ধর্মেন্দ্র প্রধান, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া—এঁরা কি পরিবারতন্ত্রের প্রোডাক্ট নন?”
প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে আরও বলেছেন, “বেঙ্গালুরুতে যাঁরা একজোট হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ২০ লক্ষ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এঁদের কেউ দুর্নীতি কাণ্ডে জেলে গেলে জোটে তাঁদের দর বেড়ে যায়। কারও গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তাঁদের দর আরও বেড়ে যায়। কোনও রাজ্যে এঁদের কারও বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্ত শুরু হলে বাকিরা তাঁর পক্ষ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।”
এই সমালোচনার জবাবে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, "দেশের প্রধানমন্ত্রী এত নির্লজ্জ হতে পারেন, আগে জানা ছিল না। মহারাষ্ট্রে অজিত পাওয়ার, প্রফুল্ল প্যাটেলদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত চলছে। সেই অজিত পাওয়ার এখন মহারাষ্ট্রে বিজেপির বন্ধু শুধু নয়, রাজ্যের অর্থমন্ত্রীও বটে। মানে বিজেপির সঙ্গে থাকলে কোনও দুর্নীতিই দুর্নীতি নয়, আর বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই সে চোর। এই ব্যভিচারের রাজনীতির এবার ইতি হবে। মানুষ এই জঘন্য রাজনীতির খেলা ধরতে পারছে।”