উত্তর-পূর্ব ভারতের জনজাতি দাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুরে গত মে মাসের ৪ তারিখ দুই গণধর্ষিতা মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানোর ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর প্রতিবাদ, ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে দেশের নানা প্রান্তে। এবার এই নিয়ে কড়া মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। জানতে চাইলেন এই ঘটনায় কেন্দ্র এবং মণিপুর সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে কি না। পাশাপাশি বললেন, "সরকার কোনও পদক্ষেপ না করলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে।"
বুধবার ১৯ জুলাই রাতে প্রকাশ্যে আসে মণিপুরের এক ভয়াবহ ভিডিও। ঘটনাটি গত ৪ মে ঘটেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুই মাঝবয়সি মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানোর। তাঁদের গণধর্ষণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। কাংপোকপি জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে। সংবাদ সূত্রের খবর, আড়াই মাস আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার খবর এতদিন জানত না মণিপুরের বিজেপি সরকার।
এই ঘটনায় আজ, বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ অবিলম্বে কেন্দ্র এবং মণিপুর সরকারের থেকে শুক্রবারের মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য, ‘"আমরা এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যদি সরকার কোনও পদক্ষেপ না করে, আদালতই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে। গণতন্ত্রে এই ধরনের ঘটনা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।"
মণিপুরের এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের তরফে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াগুলিকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় মণিপুরের ভিডিয়োগুলি শেয়ার না করা হয়। কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে, এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত প্রায় তিন মাস ধরে জনজাতি দাঙ্গায় মণিপুর অগ্নিগর্ভ। গত ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে মণিপুরের অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। জনজীবন বিপর্যস্ত। গোষ্ঠী সংঘর্ষে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজে মণিপুরে গিয়েছিলেন। তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তবুও শান্ত হয়নি মণিপুর। এই অবস্থায় মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা প্রসঙ্গে ক্রমাগত আক্রমণাত্মক ছিলেন বিরোধীরা। তাঁরা স্থির করে রেখেছিলেন, সংসদের বাদল অধিবেশনে মণিপুর নিয়ে আলোচনা ও প্রধানমন্ত্রীর জবাব চেয়ে তোলপাড় ফেলে দেবেন। তারই মধ্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে দুই মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানোর ঘটনা প্রকাশ্যে আসায়।
এমনকি এই ঘটনা সামনে আসতেই, মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীও। বলেছেন, "মণিপুরের ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাজনক। গণতন্ত্রের এই মন্দিরে দাঁড়িয়ে আমার মন আজ রাগ ও যন্ত্রণায় কাতর হয়ে রয়েছে। মণিপুরে যে ঘটনা ঘটেছে তা সভ্য সমাজের জন্য লজ্জার। গোটা দেশের মাথা হেঁট হয়ে গেছে।"