অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রাষ্ট্রদূতদের বিবৃতি ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন—তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ


তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের উপ নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলায় ১২টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস ও হাইকমিশন যৌথভাবে যে বিবৃতি দিয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে ভিয়েনা কনভেনশনের নীতিমালা লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘সাংবাদিকের স্মৃতিভাষ্যে বঙ্গবন্ধু’ সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

হাছান মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রদূতেরা রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করছেন। তাদের বলব ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার জন্য। একই সঙ্গে মির্জা ফখরুলের (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির মহাসচিব) বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে, তারা সহিংসতার রাজনীতি করতে চান, যা তারা শুরুও করেছেন। তবে সরকার তাদের কঠোর হস্তে দমন করবে।

ঢাকায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন যে বিবৃতি দিয়েছে সে বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, “১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা যেভাবে বিবৃতি দিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের মতো রাষ্ট্রদূতদের এ রকম জোটবদ্ধ হয়ে বিবৃতি দেওয়া; রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধির যে ভিয়েনা কনভেনশন আছে সেটির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমি বন্ধু রাষ্ট্রদের অনুরোধ জানাব ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার জন্য”।

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ভারত কিংবা পাকিস্তানে যখন সহিংসতা হয় বা আশ পাশের অন্য দেশে যখন সহিংসতা হয়, সেখানে তো রাষ্ট্রদূতেরা এভাবে বিবৃতি দেন না। আমাদের দেশে কেন এভাবে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। আসলে আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের কেউ কেউ এগুলো দেওয়ার জন্য তাদের উসকানি দেয়। তাই রাষ্ট্রদূতদের দোষারোপ করার আগে, এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার আগে, আমি মনে করি উসকানিদাতারা এ ক্ষেত্রে দায়ী। তবে অবশ্যই কূটনীতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূতদের আচরণ ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলা প্রয়োজন।

এদিকে গত দুই দিনের পদযাত্রায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার যদি পদত্যাগ না করে তাহলে আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকবে না। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের বক্তব্যে এটি স্পষ্ট, ওনারা সহিংসতা করতে চান, সহিংসতা শুরু করেছেন, সহিংসতা শুরু করলে সরকার বসে থাকবে না। যারা সহিংসতা করবে, দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে, তাদের কঠোর হস্তে দমন করবে। একই সঙ্গে যারা সহিংসতার সৃষ্টি করবে আমাদের দলও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে থাকবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শুক্রবার নামাজ পড়ে মসজিদে মসজিদে এ সরকারে বিপক্ষে এক দফা দাবি নিয়ে লিফলেট বিতরণ করবে। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে হাছান মাহমুদ বলেন, লিফলেট তারা বিতরণ করতেই পারে।

তিনি আরও বলেন, আজকে ফেসবুকে দেখলাম, উনি (রুহুল কবির রিজভী) ঢাকা-১৭ আসনের একজন প্রার্থীর বিষয়ে বলেছেন, আমি তার নাম বলতে চাই না, সে প্রার্থী অর্ধ-পাগল, অর্ধ-শিক্ষিত। কোনো প্রার্থীকে অর্ধপাগল, অর্ধশিক্ষিত বলা সমীচীন নয়।

হিরো আলমের ওপর হামলার পূর্ণ তদন্ত চেয়ে ঢাকায় ১৩ বিদেশি মিশনের যৌথ বিবৃতি

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের উপ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়ে বুধবার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশে নিয়োজিত ১২টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস যৌথভাবে এক বিবৃতি দেয়।

যৌথ এই বিবৃতিতে বলা হয়, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা পূর্ণ তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের জবাবদিহির দাবি জানাই। আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, সে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাই”।

বিবৃতিদাতা দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো হলো—কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস ও হাইকমিশন।

এই বিবৃতি ১৩ দূতাবাস ও হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই (সোমবার) ঢাকা-১৭ আসনের উপ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালে বেলা সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান হিরো আলম। সেখানে তাঁকে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়।

XS
SM
MD
LG