অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মণিপুরে কুকি মহিলাদের উপর সহিংসতা: গুজব আর ভুয়ো ভিডিও থেকেই সূত্রপাত


ভারতের বেঙ্গালুরুতে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে দুই আদিবাসী মহিলার উপর নিপীড়নের প্রতিবাদে জনতা টাউন হলের বাইরে লোকজন জড়ো হয়েছে। ২১ জুলাই, ২০২৩, রয়টার্স /বিপ্লব কুমার দাস
ভারতের বেঙ্গালুরুতে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে দুই আদিবাসী মহিলার উপর নিপীড়নের প্রতিবাদে জনতা টাউন হলের বাইরে লোকজন জড়ো হয়েছে। ২১ জুলাই, ২০২৩, রয়টার্স /বিপ্লব কুমার দাস

দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে কুকি ও মেনতেই জনজাতি গোষ্ঠীর দাঙ্গায় দীর্ণ উত্তর-পূর্ব ভারতের মনিপুর। সম্প্রতি সেখানে কুকি সম্প্রদায়ের দুই মহিলাকে নগ্ন করে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাঁটানোর পর গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনার ভিডিও সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। মণিপুর নিয়ে এই দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নীরব থাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত এই ঘটনাকে সমাজের পক্ষে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন। দেশ জুড়ে তোলপাড় পড়ে যাওয়ার পর গ্রেফতার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত মেইতেই সম্প্রদায়ের হেরোডাস নামে এক যুবক সহ ৪ জনকে।

সংবাদ সূত্রে প্রকাশ, মূলত কয়েকটি গুজব, এবং একটি ভুয়ো ভিডিও থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত। পুলিশ সূত্রে খবর, কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হতেই আরও কয়েকজনের সঙ্গে দল বেঁধে ভিডিও কাণ্ডের দুই নিগৃহীতা একটি জঙ্গলে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

সেই সময় মেইতেই গোষ্ঠীর মধ্যে খবর ছড়ায়, বিরোধী কুকিরা তাদের কয়েকজন মহিলাকে গণধর্ষণ করেছে। সেই ঘটনার একটি ভুয়ো ভিডিও-ও ছড়িয়ে পড়ে। এর পরেই বদলা নিতে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা ওই দলটিকে আক্রমণ করে মেইতেইরা। কুকিদের ওই ছোট্ট দলটিতে ছিলেন মোটে ৫ জন- দুজন পুরুষ, এবং ৩ জন মহিলা। এঁদের মধ্যে ৩ জন হলেন একই পরিবারের সদস্য-৫৬ বছর বয়সি এক বাবা, তাঁর ১৯ বছরের ছেলে, এবং ২১ বছরের মেয়ে। এছাড়া আরও দুজন মহিলা ছিলেন, যাঁদের বয়স যথাক্রমে ৪২ বছর এবং ৫২ বছর।

দায়ের হওয়া এফআইআর অনুযায়ী, ৫ জনের ওই দলটির সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল নংপোক-সেকমাই থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মীর একটি দলের। প্রাণ বাঁচাতে পুলিশের কাছেই সাহায্য চান ওই ৫ জন। কিন্তু সেই সময় থানা থেকে দু-কিলোমিটার দূরে প্রায় ১০০০ মেইতেই জনগোষ্ঠীর একটি দল, যাদের মধ্যে পুলিশও ছিল, তারা হামলা চালিয়ে ওই পুলিশকর্মীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ৫ জন কুকিকে।

সূত্রের খবর, উন্মত্ত জনতার হাত থেকে দিদিকে বাঁচাতে গিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৯ বছরের যুবক। এরপর তাঁর বাবাকেও খুন করে জনতা। এরপর ২১ বছরের তরুণী সহ দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে গ্রামে ঘোরানো হয়। তারপর গণধর্ষণ করা হয় তাঁদের। তৃতীয় মহিলাকে ধর্ষণ না করা হলেও তিনিও যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

৪ মে এই ঘটনার পর ১৮ মে দুই নিগৃহীতার পরিবারের তরফে একটি জিরো এফআইআর দায়ের করা হয়। পরে ২১ মে সেই মামলাটি নংপোক-সেকমাই থানায় পাঠানো হয়।

মণিপুরে জাতিসংঘর্ষের কারণে ৩মে থেকেই বন্ধ ছিল ইন্টারনেট। পরে গত বুধবার সেই ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

XS
SM
MD
LG