বিশ্বের দুইশ’ কোটি মানুষ এখনো খাদ্য নিরাপত্তার বাইরে রয়েছে বালে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি, সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা চালু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক 'খাদ্য ব্যাংক' প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাক করেন বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী।
সোমবার (২৪ জুলাই) ইতালির রাজধানী রোমে ইউএন ফুড সিস্টেম সামিট প্লাস-টু স্টক টেকিং মোমেন্ট (ইউএনএফএসএস+২) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, “চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্য, সার, জ্বালানি এবং আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকট বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা ও অপুষ্টির সমস্যাকে তীব্রতর করেছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “পুষ্টিকর খাদ্য সংগ্রহের অক্ষমতার জন্য কৃষি ও খাদ্য পণ্যের দামই একমাত্র বাধা নয়। তাই, সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রবর্তন প্রয়োজন।” তিনি বলেন, “বিশ্বের প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ এখনো অপুষ্টিতে ভুগছে। প্রায় দুইশ’ কোটি খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে, আর প্রায় তিনশ’ কোটি মানুষ সুষম খাদ্য থেকে বঞ্চিত।”
তিনি সারা বিশ্বে টেকসই, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পাঁচটি প্রস্তাব রাখেন; যার মধ্যে রয়েছে, আধুনিক কৃষিতে বিনিয়োগের জন্য বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিস্তৃত করা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, “আধুনিক কৃষিতে বিনিয়োগে বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্থিক প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন।” দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, “জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক সূচিত কৃষ্ণ সাগর শস্য চুক্তির কার্যকারিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি খাদ্য ও সার রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ যেকোনো বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
তৃতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক 'খাদ্য ব্যাংক' প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে আসতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবর্তনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে হবে।”
চতুর্থ প্রস্তাবে বলেন, ন্যানো-টেকনোলজি, বায়ো-ইনফরমেটিক্স এবং উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে। পঞ্চম প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের অপচয় রোধ করতে তরুণদের সম্পৃক্ত করে একটি ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যদি আমরা সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমরা টেকসই বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে পারবো।’
সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল, সামোয়ার প্রধানমন্ত্রী নাওমি মাতাফা, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং এফএও মহাপরিচালক ডক্টর কু ডংইউ।