লাল মলাটের একটি ডায়রি নিয়ে তোলপাড় চলছে ভারতের পশ্চিমের রাজ্য রাজস্থানের রাজনীতিতে। রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের সদ্য বরখাস্ত হওয়া মন্ত্রী রাজেন্দ্র সিং গুধা বিধানসভায় একটি লাল রঙের ডায়েরি তুলে ধরে দাবি করেছেন, "এর প্রতিটি পাতায় আছে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের কেলেঙ্কারি।" স্পিকার সিপি যোশী তাঁকে মার্শাল দিয়ে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে দেন। তাঁর আগে কংগ্রেসের কয়েকজন বিধায়ক ডায়েরি কেড়ে নিয়ে কয়েকটি পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।
গুধার দাবি, "ডায়েরির বাকি পাতায় রাজনীতিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেওয়ার মতো তথ্য এখনও মজুত আছে। মুখ্যমন্ত্রীর মুখোশ খুলে দেওয়ার জন্য যা যথেষ্ট।" স্বভাবতই রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনের চার মাস আগে এই ঘটনায় গুধাকে নিয়ে তুমুল কৌতূহল তৈরি হয়েছে। গেহলট বিরোধীরা দারুণ খুশি কারণ খানিকটা হলেও বিপাকে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বরখাস্ত মন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি।
ঘটনার সূত্রপাত দিন কয়েক আগে বিধানসভায় মণিপুর নিয়ে মন্ত্রী রাজেন্দ্র সিং-এর বিবৃতি ঘিরে। দিন কয়েক আগেই যোধপুরে একটি গণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাজস্থান বিধানসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনায় রাজেন্দ্র বলেন, "রাজস্থানে নারীরা নিরাপদ নন। মণিপুর নিয়ে আলোচনার আগে রাজস্থানে নারী সুরক্ষা নিয়ে বিতর্ক হওয়া দরকার।"
সেদিন সন্ধ্যাতেই মন্ত্রী রাজেন্দ্রকে বরখাস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী গেহলট। এর পরই লাল ডায়েরি প্রকাশ্যে আনেন বরখাস্ত মন্ত্রী। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ রাজেন্দ্র রাঠোরের বাড়িতে আয়কর অভিযানের আগে গেহলটের নির্দেশেই তিনি ডায়েরিটি নিয়ে আসেন। মুখ্যমন্ত্রী ডায়েরিটি পুড়িয়ে ফেলতে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যত্ন করে সেটি রেখে দেন।
গুধার বক্তব্য, ২০২০ তে শচীন পাইলটের বিদ্রোহের সময় বিধায়কদের সন্তুষ্ট করতে বিপুল টাকা দেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর তোফা পাওয়া বিধায়কদের নাম লেখা আছে ডায়েরিতে। এছাড়া রাজ্যসভার ভোটের সময়ও টাকা দিয়ে ভোট কেনা হয়েছিল। ঘুষখোর বিধায়কদের নামও লেখা আছে ওই ডায়েরিতে।
স্বভাবতই বিজেপি চাইছে রেড ডায়েরিকে হাতিয়ার করতে। রাজস্থানের বিজেপি নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, "রাজস্থানে কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতি নিয়ে আমরা প্রথম থেকেই মানুষকে বলে আসছিলাম।" বিধায়কদের দেওয়া টাকার উৎস কী, রেড ডায়েরিতে কী আছে, এই সব বিষয়ে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন বিজেপির মন্ত্রী।
পর্যবেক্ষকদের মতে, শচীন পাইলটের দাবি মেনে গেহলট যখন বিজেপি নেত্রী তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে কমিটি গড়ার পরিকল্পনা করছেন তখন বরখাস্ত মন্ত্রী বিজেপি শিবিরের হাতে বড় অস্ত্র তুলে দিয়েছেন রাজনীতির লাল ডায়েরি প্রকাশ্যে এনে।
তাঁদের মতে, রাজস্থানে বিধানসভা ভোটের আর মাস চারেক বাকি। এই সময় দলের বিক্ষুব্ধ নেতার বিদ্রোহে রীতিমত বিপাকে পড়েছেন গেহলট।
যদিও রাজেন্দ্র বিগত বিধানসভা ভোটে জিতেছিলেন মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির টিকিটে। বিএসপির টিকিটে জেতা ছয় বিধায়কই এখন কংগ্রেসে। ২০২০-তে তাঁদের যোগদানের সময় মায়াবতী টাকা দিয়ে বিধায়ক কেনার অভিযোগ তুলেছিলেন গেহলটের বিরুদ্ধে। এখনকার পরিস্থিতি সামলাতে কংগ্রেসের নেতারা পাল্টা বলছেন, ডায়েরিতে নিশ্চয়ই রাজেন্দ্রর নামও আছে।