বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথগুলোতে শনিবার (২৯ জুলাই) অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এই অবস্থান কর্মসূচিতে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছেন। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময়, মাতুয়াইল ও শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়।
শনিবার ৫ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে সমবেত হয় বিএনপি কর্মীরা। এরপর, ধোলাইখাল, উত্তরা, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ ও গাবতলী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমানউল্লাহ আমানসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী পুলিশ আটক করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি সত্ত্বেও, বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে অবস্থান নেয়।
বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার ধোলাইখাল এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা সড়কের একপাশে সমবেত হন। তখন তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। পুরান ঢাকার নয়াবাজারে বিএনপির এই কর্মসূচি পালনের কথা ছিলো। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিলে, তারা নয়াবাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ধোলাইখাল এলাকায় সমবেত হন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধোলাইখাল মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়-কে পিটিয়ে আহত করে পুলিশ। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানকে দুপুর ১২টার দিকে গাবতলী বাসস্টেশন থেকে আটক করে পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে আমান নেতা-কর্মীদের নিয়ে খালেক পরিবহনের বাস কাউন্টারের সামনে অবস্থান নেন। এর কাছাকাছি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলো।
এক পর্যায়ে পুলিশ আমান ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। আমান প্রত্যাখ্যান করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে, আমান মাজার রোডের নাবিল পরিবহনের সামনের সড়কে শুয়ে পড়েন। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে পুলিশের ভ্যানে তুলে নেয়। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির আরো ৫ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে বিএনপির কয়েকশ’ নেতা-কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতালের কাছে জড়ো হন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট এবং জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এতে কয়েকজন আহত হন। এ ছাড়া শনির আখড়া ও রায়েরবাগ এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ।
উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঐ এলাকায় সমবেত হন এবং তারা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। পুলিশ তাদের এলাকা খালি করতে বলে; তারা কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। এ সময় পুলিশ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী এবং সাংবাদিক আহত হন।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে গাবতলী এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিছিলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে শনিবার (২৯ জুলাই) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়, বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ৯০ জনকে আটক করা হয়েছে। দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
আহতদের মধ্যে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান ও সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাহিদ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।