সোমবার ৩১ জুলাই রাত থেকে ভারতের হরিয়াণা রাজ্যে সামপ্রদায়িক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। হিন্দুদের এক ধর্মীয় মিছিলকে আটকানোর অভিযোগে সোমবার রাত থেকে হিংসা ছড়ায় সে রাজ্যে।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গুরুগ্রামের সেক্টর ৫৭-এর অঞ্জুমান জামা মসজিদে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। মসজিদ লক্ষ্য করে গুলিও চালানো হয়েছিল। সেই হামলার ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ওই মসজিদের ইমাম, বিহারের বাসিন্দা ১৯ বছরের হাফিজ সাদ। সেই খবর পাওয়ার পর থেকেই ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন উত্তর বিহারের সীতামারহি জেলার মানিয়াডিহ গ্রামের বাসিন্দারা।
দাদা শাদাবের সঙ্গে ট্রেনে করে গ্রামে ফেরার কথা ছিল হাফিজের। "শাদাব আমাদের ফোন করে জানায় যে ভাই কিছুতেই সকালের আগে কাজ ছেড়ে মসজিদ থেকে বেরোতে রাজি হচ্ছে না,’ জানিয়েছেন হাফিজের মামা।
মসজিদের প্রধান ইমাম তখন শহরে ছিলেন না। বৃহস্পতিবার ৩ অগাস্ট ফেরার কথা তাঁর। কিন্তু তাঁর ফেরা না পর্যন্ত মসজিদ ছেড়ে না যাওয়া নিজের কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন হাফিজ, জানিয়েছেন তাঁর পরিবার।
হাফিজের দাদাও গুরুগ্রামে থাকেন। টিউশন পরিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। চোখের সামনে সাম্প্রদায়িক হানাহানি দেখে তিনি ভাইকে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাফিজ প্রাণের চেয়েও কর্তব্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আর তা করতে গিয়েই প্রাণ হারাতে হল তাঁকে।
১৯ বছরের হাফিজ ছিলেন অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। সংবাদ সূত্রের খবর, গুলি চালানোর আগে তাঁকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। যদিও সেই খবর মানতে পারছেন না হাফিজের বাবা মুশতাক। ছেলের বিরুদ্ধে বড় কোনও চক্রান্ত করা হয়েছিল বলে মনে করছেন তিনি। "আমার ছেলের কী দোষ ছিল? কেন মসজিদের নায়েব ইমামের উপর এভাবে হামলা করা হয়েছে, কেন অন্যদের ওপর হামলা করা হয়েছে? আমি বিচার চাই। সরকারের কাছে আর কিছুই চাই না," দাবি মুশতাকের।
"আমরা কাল মুজফফরপুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম সাদ এবং তার ভাইকে স্টেশন থেকে আনার জন্য। তার বদলে এখন, আমরা এখানে অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় আছি যেটা ওর লাশ নিয়ে আসবে," কান্নায় ভেঙে পড়ে জানান মুশতাক।
সীতামারহির পুলিশ সুপার মনোজ তিওয়ারি জানিয়েছেন, "গ্রামটি নানপুর থানার অধীন। আমি এসএইচওকে নির্দেশ দিচ্ছি যে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় পরিবারটির যা সাহায্যের প্রয়োজন, তা যেন করা হয়।"