ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একই সময়ে নানা হিংসাত্মক ঘটনার খবর দেশের পর্যবেক্ষক মহলে দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছে। সোমবার একদিকে যখন হরিয়াণার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেদিনই, জয়পুর-মুম্বাই সেন্ট্রাল এক্সপ্রেসে এক আরপিএফ কনস্টেবলের গুলিতে তিন যাত্রী ও এক অফিসারের নিহত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় পড়ে যায় দেশ জুড়ে।
ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত ওই আরপিএফ চেতন সিংকে নিয়ে নানা তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, তিনি পুলিশকে সহযোগিতা করছেন না, উল্টে স্লোগান তুলছেন থানায় বসে। আবার তার পরিবার দাবি করেছে, চেতনের মাথায় রক্ত জমে আছে, তার মানসিক সমস্যা হচ্ছে।
এসবের মধ্যেই সামনে এসেছে, চেতনের গুলিতে নিহত তিন যাত্রীর পরিচয়। তাঁদের নাম সৈয়দ সইফুল্লা, আবদুল কাদির মহম্মদ ও আসগর শেখ। এঁদের মধ্যে আসগর কাজের সন্ধানে মুম্বই যাচ্ছিলেন। সৈয়দ আজমির দরগা দেখে এসে মুম্বই হয়ে হায়দরাবাদ যাচ্ছিলেন। আবদুল কাদির গ্রামে যাচ্ছিলেন মহরম উপলক্ষে, তাঁর এই মাসেই মুম্বই থেকে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল পরিবারের কাছে।
জানা গেছে, সৈয়দ সইফুল্লার বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান। ছোটটির বয়স ছ’মাস। সৈয়দ হায়দরাবাদের নামপল্লী এলাকায় একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করতেন। সেই দোকানের মালিকের সঙ্গেই আজমির শরিফ দরগায় গিয়েছিলেন তিনি। এর পরে ওই জয়পুর-মুম্বই সেন্ট্রাল এক্সপ্রেসে করে আজমির থেকে মুম্বই হয়ে হায়দরাবাদ ফিরছিলেন সৈয়দ।
আইমিম দলের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ইতিমধ্যেই তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওকে অনুরোধ করেছেন, সৈয়দের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারকে সাহায্য করার জন্য ।
চেতনের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন আব্দুল কাদির মহম্মদ। জানা গেছে, তিনি ২৫ বছর ধরে মহারাষ্ট্রের নালা সোপারার বাসিন্দা। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি তিনি দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনি দুবাই চলেও গিয়েছিলেন, কিন্তু ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সমস্যার কারণে আব্দুল যেতে পারেননি। তিনি মুম্বইতেই ব্যবসা করতেন। সোমবার মহরম উপলক্ষে তিনি তাঁর নিজের গ্রাম ভানুপুরে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। দুঃসংবাদ পেয়েই দুবাই থেকে মুম্বই ফিরে এসেছে তাঁর পরিবার। আব্দুলের মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁদের হাতে।
চেতনের গুলিতে নিহত আর এক যাত্রী আসগর শেখ ওই ট্রেনে মুম্বই যাচ্ছিলেন কাজের সন্ধানে। বিহারের মধুবনী জেলার বাসিন্দা আসগর তিন বছর আগে জয়পুরে চলে আসেন এবং সেখানেই চুড়ি তৈরির কাজ করতেন। সম্প্রতি স্ত্রী, চার মেয়ে, এক ছেলের সংসারে অনটন বাড়তে থাকলে ভাল কাজ খুঁজতে মুম্বই যাচ্ছিলেন তিনি।
আসগরের পরিবারের তরফে ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরির দাবি করা হয়েছে। আসগরের ভাই আমানতুল্লা ইতিমধ্যেই দাদার মৃত্যুর বিচারের দাবিতে মুম্বইয়ের জেজে হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
সোমবারের নৃশংস এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন রেল পুলিশ চেতন সিং। নিজের সার্ভিস রিভলভার দিয়েই যাত্রীদের গুলি করে খুন করেছেন তিনি । অভিযোগ, গুলি চালানোর পরে স্লোগান দিতেও শোনা গিয়েছে তাকে। তার বাড়ি উত্তরপ্রদেশের মথুরায়।
তার পরিবার জানিয়েছে, চেতন সিং খুবই চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। মানসিকভাবে বেশ চাপে ছিল। সে কথা সহকর্মীদেরও জানিয়েছিল চেতন।
চেতন তার বাবার মৃত্যুর পর আরপিএফ কনস্টেবল হিসেবে চাকরি পায়। এদিকে তার ভাই লোকেশ মথুরায় ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে। পরিবার জানিয়েছে, "চেতন কখনওই কোনও বিবাদে জড়ায়নি। বাবার মৃত্যুর পর সে গত ১৪ বছর ধরে রেলওয়েতে কাজ করছে। কিন্তু কখনও নিজের সহকর্মীদের সঙ্গে কোনও ঝগড়া ঝামেলা করেছে বলে অভিযোগ ওঠেনি।"
তার পরেও কেন এমন কাণ্ড করলেন চেতন, কেন গুলি করে মারলেন চারজন জলজ্যান্ত মানুষকে, এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।