শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল দুই সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টকে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের প্রতি রুল নিষ্পত্তির এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়।
ওই মামলায় এ বছরের ৬ জুন ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক। অপর ৩ জন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূসসহ ৪ জন। এর শুনানি নিয়ে ২৩ জুলাই বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রুল দেন। রুলে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলার বাদীসহ প্রতিপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। যা গত ২৫ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৩ অগাস্ট দিন নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। ড. ইউনূসসহ ৪ জনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১৬ অগাস্ট কলকারাখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকমের কার্যালয় পরিদর্শন করে শ্রম আইনের লঙ্ঘন দেখতে পান। একই বছরের ১৯ অগাস্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গ্রামীণ টেলিকমকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ৬৭ জন কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করার কথা থাকলেও গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ তা করেনি।
এ ছাড়া, কর্মচারী অংশীদারত্ব ও কল্যাণ তহবিল গঠন এবং কোম্পানির ৫ শতাংশ লভ্যাংশ কর্মচারীদের পরিশোধ করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কলকারাখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এস এম আরিফুজ্জামান মামলা করেন।
এ বছরের ৬ জুন ঢাকার শ্রম আদলত ৩–এর বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।
পরে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।