অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের নির্বাচনে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে


বাংলাদেশের নির্বাচনে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে
বাংলাদেশের নির্বাচনে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমের অবিচ্ছেদ্য ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তরা বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ অগাস্ট) 'গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা' (রোল অব মিডিয়া ইন ডেমোক্রেসি) শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে (পলিসি ক্যাফে) বক্তারা এ কথা বলেন।

ইউএসএআইডি, আইএফইএস এবং সিইপিপিএসের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) এই পলিসি ক্যাফের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বিআইপিএসএস সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, তথ্যের জায়গায় সঠিক তথ্য না থাকলে, অপতথ্য জায়গাটি দখল করে নেবে। এ জন্য সঠিক তথ্য দিয়ে তথ্যের জায়গা পূরণ করতে হবে।

তিনি একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের গুরুত্ব তুলে ধরেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেখানে জাতীয় নির্বাচন খুব বেশি দূরে নয়। নির্বাচনে গণমাধ্যম প্রধান ভূমিকা পালন করবে। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।

আলোচনায় অংশ নেন প্রথম আলোর ইংরেজি ওয়েবের প্রধান আয়েশা কবির ও দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদকীয় প্রধান শাহরিয়ার ফিরোজ। তাঁরা গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে তাঁদের অন্তর্দৃষ্টি তুলে ধরেন।

আয়েশা কবির বলেন, যে দেশে বিরোধী দল খুব বেশি শক্তিশালী নয়, সেখানে জনগণের মতামত পৌঁছে দিতে গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের একটি সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। তবে প্রায়শই এটি রাজনৈতিক সত্তা, করপোরেট বা এমনকি বিদেশি সত্তা দ্বারাও বাধার মুখোমুখি হয়, যা একটি প্রাণবন্ত গণতান্ত্রিক সমাজ নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই উপেক্ষা করা উচিত।

শাহরিয়ারের ফিরোজ বলেন, গণতন্ত্রে জনগণের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গণমাধ্যমের দায়িত্ব। কিন্তু সরকার ও অন্য সংস্থার কাছ থেকে গণমাধ্যম যে চ্যালেঞ্জ ও বিধিনিষেধের মুখোমুখি হতে হয়, তার বিরূপ প্রভাব রয়েছে। যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজকে হুমকির মুখে ফেলে।

গণমাধ্যম কীভাবে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে—এমন প্রশ্নের জবাবে আয়েশা কবির গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেন এবং জনগণ তাদের চারপাশে কী ঘটছে সে সম্পর্কে ধারণা পায়।

তিনি বলেন, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক, উভয় ভূমিকাই পালন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেহেতু প্রচুর ভুয়া খবর, ভুল তথ্য ও অপতথ্য ছড়ানো হয়, তাই তা মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু উজ্জ্বল দিক হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া তথ্য যাচাই করতে মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মূলধারার মাধ্যমের ওপর নির্ভর করে এবং এইভাবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মূলধারার মাধ্যমের উপকার করে থাকে।

আয়েশা কবির আরও বলেন, বিভিন্ন সংস্থার চাপ সত্ত্বেও গণমাধ্যমের সাহসী হওয়া এবং সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। প্রকৃত তদন্ত ও ফ্যাক্ট চেকিং নিশ্চিত করতে হবে।

শাহরিয়ার ফিরোজ বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার র‍্যাঙ্কিংয়ে পতন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, সমৃদ্ধ গণমাধ্যম শিল্প থাকা সত্ত্বেও র‍্যাঙ্কিং নিচে নেমে যাচ্ছে।

তিনি কিছু পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে টিভি চ্যানেল ও গণমাধ্যমের উপস্থিতি বাড়লেও তারা জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছে না, বরং চ্যানেল মালিক ও সরকারের মধ্যে একধরনের সহানুভূতিশীল সম্পর্ক রয়েছে।

শাহরিয়ার ফিরোজ মনে করেন, ভুয়া খবর ও ভুল তথ্য মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়ানো হয় এবং তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কীভাবে নির্ভরতা কমানো যায় এবং মূলধারার গণমাধ্যমের ওপর আরও বেশি নির্ভর করা যায় সেদিকে মনোনিবেশ করা দরকার।

এ ছাড়াও নৈতিকতা নিয়ে কথা বলার সময় তিনি মিডিয়া চ্যানেলগুলোর মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, তাদের ও সরকারের মধ্যে সংযোগ পেশাদার সাংবাদিকতা নিশ্চিত ও বিদ্যমান অন্য চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণ।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্কলাররা উপস্থিত ছিলেন।

XS
SM
MD
LG