পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে ৯০ দিনের মধ্যে একটি সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে সরিয়ে অন্তর্বর্তী উত্তরসূরি আনা হচ্ছে।
পাঁচ বছরের মেয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার তিন দিন আগে বুধবার আইনসভা ভেঙে দেওয়া হয়। এটি ছিল পাকিস্তানের ৭৬ বছরের অশান্ত গণতান্ত্রিক ইতিহাসে টানা তৃতীয় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি যারা নির্ধারিত মেয়াদ শেষ করেছে।
কিন্তু ২৪ কোটি মানুষের দেশে আসন্ন ভোট কয়েক মাসের জন্য বিলম্বিত হতে পারে কারণ পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন, যারা ভোটের আয়োজন করে, বলছে যে তাদের প্রথমে নতুন আদমশুমারির তথ্যের ভিত্তিতে দেশব্যাপী নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্মাণ করতে হবে।
২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তার পূর্বসূরি ইমরান খানকে যৌথভাবে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে শরিফ প্রায় এক ডজন দলের জোট সরকারের নেতৃত্ব দেন।
বিদায়ী সরকার এক গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট ও পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সাথে লড়াই করেছে কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ঋণ নেওয়ার জন্য পাকিস্তান জুলাই মাসে কঠোর সংস্কার প্রবর্তন করেছিল। গত বছরের বিধ্বংসী বন্যা ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি শক্তির দাম বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার চেষ্টা করার জন্য শরীফ তার প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন।
সমালোচকরা স্বীকার করেছেন যে, কয়েক বছর ধরে গভীরভাবে প্রোথিত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ শরিফের ১৬ মাসের মেয়াদে মোকাবিলা করা কঠিন ছিল। কিন্তু সামরিক বাহিনীকে খুশি করার জন্য পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে তড়িঘড়ি করে কয়েক ডজন বিতর্কিত বিল পাস করার জন্য সরকারের নিন্দা করেছেন তারা।
পাকিস্তানের স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের প্রধান হিনা জিলানি বলেন, "আমি মনে করি এই সংসদ রাষ্ট্রকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিয়েছে।"
ভিওএ-কে তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি তারা দ্রুত এমন একটি পর্যায়ে নেমে এসেছে যেখানে মনে হচ্ছে তারা পাকিস্তানের বিভিন্ন বেসামরিক ক্ষেত্রের সামরিকীকরণের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।"
প্রশ্নবিদ্ধ বিলগুলোর মধ্যে রয়েছে, তথাকথিত সরকারি গোপনীয়তা আইন এবং পাকিস্তান সেনা আইনের সংশোধনী। সমালোচকরা বলছেন যে, সংশোধিত আইনগুলি সশস্ত্র বাহিনীর মানহানিকে অপরাধমূলক করেছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে ভিন্নমতাবলম্বী এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে।
আহমেদ বিলাল বলেন, "এর মানে, পাকিস্তানের সামনের দিনগুলিতে যে ধরনের রাজনৈতিক শৃঙ্খলা আমাদের অনুমান করা উচিত—আমার মনে হয়,এই আইনগুলির মাধ্যমে এর ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।"
ইসলামাবাদভিত্তিক স্বাধীন চিন্তক গোষ্ঠী পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অফ লেজিসলেটিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সির সভাপতি মেহবুব। এই সংস্থা পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে মজবুত করতে কাজ করে।
মেহবুব ভিওএ-কে বলেন, "সম্ভবত, আমরা ভবিষ্যতে আরও দমনমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে চলেছি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার খর্ব করা হবে।"