চলতি মাসে আরো ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেল চালিত বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যদিয়ে এই বছর মোট ১ হাজার মেগাওয়াট ডিজেল চালিত বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বন্ধ করার জন্য চলতি বছর চারটি বেসরকারি কোম্পানির ছয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হলো; বাংলা ট্র্যাক-এর ৩০০ মেগাওয়াট (যশোর ১০০ মেগাওয়াট ও দাউদকান্দি ২০০ মেগাওয়াট), এগ্রেকো-এর ২০০ মেগাওয়াট (আওড়াহাটি ১০০ মেগাওয়াট ও ব্রাহ্মণগাঁও ১০০ মেগাওয়াট), এপিআর এনার্জি-এর পানগাঁও ৩০০ মেগাওয়াট এবং প্যারামাউন্ট-এর বাঘাবাড়ির ২০০ মেগাওয়াট।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, “ইতোমধ্যেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বেসরকারি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। বাকি ২০০ মেগাওয়াট আগস্টে বন্ধ করা হবে।” তিনি আরো বলেন, “এসব প্ল্যান্ট বন্ধ হলে, বছরে সরকারের প্রায় ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।”
বিপিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে, ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ১ হাজার ২৯০ মেগাওয়াট; যা মোট সক্ষমতার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিপিডিবি’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিজেলের মাধ্যমে প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ ছিলো ১৫৪ দশমিক ১১ টাকা। আর, গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর খরচ ছিলো ৩ দশমিক ৪৬ টাকা। অন্যদিকে, কয়লাচালিত প্ল্যান্টের জন্য খরচ হয়েছে ৯ দশমিক ১৭ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক প্ল্যান্টে প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ ছিলো ১১ দশমিক ১০ টাকা।
বিপিডিবির অন্য একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, ডলার ও ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায়, উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। সব বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) ডলারের দামের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত হয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তির অধীনে ডলারে অর্থ দেয়া হয়।”
বিপিডিবি’র এই কর্মকর্তা জানান, “যদি ডলারের বর্তমান দাম এবং ডিজেলের বর্তমান দাম তুলনা করা হয়; তবে, ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ ২০২১-২২ সালের তুলনায় ২০২৩-২৪ সালে অনেক বেশি হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ডিজেলচালিত প্ল্যান্টের ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের শুল্ক ১৭২ দশমিক ৫ টাকার বেশি। কারণ এখন ডলারের দাম ১০৯ টাকা। অথচ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তা ছিল ৮৫ টাকা।”
তিনি আরো বলেন, “একইভাবে লিটারপ্রতি ডিজেলের দাম ছিলো ৬৫ টাকা, ২০২১ সালের নভেম্বরে তা হয় ৮০ টাকা এবং গত বছরের আগস্টে তা বেড়ে হয় ১১৪ টাকা হয়েছে।”
সরকারি সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে ব্যয়বহুল এই ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মালিকদের ১০৩ কোটি ডলার বা ১১ হাজার ২৮১ দশমিক ৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম বলেছেন, ব্যয়বহুল এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তিনি বলেছেন, “ব্যয়বহুল ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে চালু রাখা অর্থহীন... সরকারের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাকি সব ডিজেল চালিত প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেয়া।”