কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে, লালমনির হাটে তিস্তার পানি বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ৩৫ সেন্টিমিটার। এই উচ্চতার অর্থ হলো, তিস্তা এই পয়েন্টে বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার (বিপদ সীমা ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী লোকজন জানান, কয়েকদিন থেমে থেমে ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে। পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে পানি বাড়তে থাকে। সোমবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে।
ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায়, উজানের প্রবাহ ডালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। নদীপাড়ের মানুষজন জানায়, পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
নিম্নাঞ্চলের ফসলের জমিতে পানি উঠেছে। শত শত পরিবার জলবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই চরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মহিষখোঁচা ইউনিয়নের চর গোবর্ধন এলাকার মমিনুর রহমান বলেন, “রাত থেকে পানি বাড়ছে তিস্তায়। নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের খেত, রাস্তাঘাট ও পুকুর। কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।”
হলদি বাড়ি এলাকার তিস্তা পাড়ের আমছার আলী বলেন, “নদীতে পানি বাড়লেই চরাঞ্চলের মানুষ আটকা পড়ে। বর্ষাকালে বন্যা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। রাত থেকে আটকা হয়ে পড়েছি। ক্রমেই বাড়ছে পানি। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। পরিবার পরিজন নিয়ে মাচাংয়ের ওপর বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে আমাদের।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌলা বলেন, “বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সোমবার সকাল ৬টা বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।”
কুড়িগ্রামে বাড়ছে সব নদ-নদীর পানি
এদিকে, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদ সীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলগুলো। তলিয়ে গেছে আমন-আবাদসহ বিভিন্ন সবজির খেত।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বৃদ্ধি পেলেও, এখনো বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তার অববাহিকার গড়াইপিয়ার এলাকার নয়ন মিয়া বলেন, “২-৩ দিন ধরে আবার তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এদিকে, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও নদী ভাঙে, পানি কমলেও নদী ভাঙে। তিস্তা পাড়ের মানুষের ১২ মাসই কষ্ট।”
ধরলা নদীর অববাহিকার সিতাইঝাড় এলাকার ইসমাইল হোসেন বলেন “ধরলা নদীর পানি বাড়ার কারণে বাড়ির চারদিকে পানি চলে এসেছে। এভাবে যদি আরো ২-৩ দিন পানি বাড়ে, তাহলে না খেয়ে থাকতে হতে পারে।”
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, “জেলায় টানা বৃষ্টিপাতের ফলে ৩৩৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ৫০ হেক্টর জমির সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।” পানি নেমে গেলে সবঠিক হয়ে যাবে বল জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা ও দুধকুমারের পানি। ২-৩ দিনের মধ্যে নদ নদীর পানি কমতে শুরু করবে বলে আশা করছন তিনি।
বজ্রবৃষ্টি হতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে সোমবার সকাল ৯টা থেকে শুরু করে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ আট বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বাগেরহাটের মোংলায় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গোপালগঞ্জে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কক্সবাজারের সন্দ্বীপে সর্বোচ্চ ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আর, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল এবং আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি নিম্নচাপ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।