ভারতে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির 'ইন্ডিয়া' জোটের অন্যতম বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। তবে আপাত তার অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা দানা বাঁধছে।
গত সপ্তাহে দু’দিন রাজধানী দিল্লিতে কাটালেও বিরোধী দলের কোনও নেতা-নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। অথচ পাটনায় গত ২৩ জুলাইয়ের বৈঠকের আগে তিনিই নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলিকে একজোট করেছেন। কিন্তু বহুদিন হল জোট নিয়ে কোনও কথা বলছেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।
বস্তুত বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, গত মাসে বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী দল মিলে ইন্ডিয়া জোট গড়ে তোলার পর থেকেই নীতীশ নীরব। প্রথমে শোনা গিয়েছিল জোটের 'ইন্ডিয়া' নাম তার পছন্দ নয়। তবে প্রকাশ্যে তা নিয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু তার দল বহুবারই মুখ খুলেছে। তারা দাবি তুলেছে ইন্ডিয়া জোটের মুখ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা কিংবা জোটের চেয়ারপারসন করা হোক জনতা দল ইউনাইটেডের নেতা নীতিশ কুমারকেই।
অন্যদিকে, আম আদমি পার্টি বা আপ-এর দাবি মেনে কংগ্রেস সংসদে দিল্লি অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করলেও কেজরিওয়ালের দল রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড় এবং তেলেঙ্গানায় কংগ্রেসের বিরোধীতা করছে পুরোদমে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই চার রাজ্যের সব ক’টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে আপ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছত্তীসগড়ে গিয়ে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিও ঘোষণা করেছেন।
আপ-এর ঘোষণার পরই কংগ্রেসের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কারণ বিগত ১০ বছরে দেখা গিয়েছে, আপ ময়দানে থাকলে তারা বিজেপি নয়, কংগ্রেসের ভোটে থাবা বসায়। এমনকী বিজেপি শাসক দল হলেও প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের তুলনায় কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েছেন আম আদমি পার্টির প্রার্থীরা। গুজরাতে ২৭ বছর ক্ষমতাসীন বিজেপি, কংগ্রেস ও আপের মোকাবিলা করে রেকর্ড সংখ্যক আসনে জিতে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। সেখানে আপ ১২ শতাংশ ভোট ও ১২টি আসন জিতেছে। আপ প্রার্থীরা জিতেছেন কংগ্রেসের আসনে।
চার রাজ্যের মধ্যে দু’টিতে কংগ্রেস ক্ষমতায়। এরমধ্যে দিল্লি লাগোয়া রাজস্থানে আপ-এর প্রভাব বেশি। সেখানে দু’শো আসনের প্রার্থী দিন কয়েকের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের আপ আহ্বায়ক।
মধ্যপ্রদেশে বিজেপিকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে কংগ্রেস। কিন্তু আপ-এর ঘোষণার পর সব অঙ্ক ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, আপ-এর উপস্থিতি কংগ্রেসের যাত্রা ভঙ্গ করে বিজেপির জয় নিশ্চিত করবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। আর লোকসভা ভোটের আগে সেটাই হবে ইন্ডিয়া জোটের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব কেজরিওয়ালের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলেনি। যদিও সময় হাতে আছে। চার রাজ্যেই ভোট হবে নভেম্বরে।
তার আগে ৩১ অগাস্ট-১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বসতে চলেছে ইন্ডিয়া জোটের পরবর্তী বৈঠক। সেখানে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়া নিয়ে কথা হবে দলগুলির মধ্যে। যৌথ আন্দোলন নিয়ে কথা হতে পারে। কিন্তু বিধানসভা ভোটে বিরোধী জোট হবে কি না, সে বিষয়ের কথা এখনও এজেন্ডায় নেই বলেই জানা গেছে।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, নীতীশ কুমারের বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলেছে ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের। বিশেষ করে কংগ্রেস নেতারা খুবই চিন্তিত। সংবাদ সূত্রের খবর, বেঙ্গালুরুর বৈঠকের পর নীতীশের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কংগ্রেসের ভাবনায় আছে আগের ইউপিএ জোটের মতো সনিয়াই হবেন ইন্ডিয়া-র নেত্রী। সবচেয়ে বড় দলের নেতা-নেত্রীই জোটের প্রধান হয়ে থাকেন। তবে অবশ্যই সনিয়া বা কংগ্রেসের কাউকে দল প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসাবে তুলে ধরবে না।
কিন্তু নীতীশের দলের অঙ্ক আলাদা। তারা চাইছে নীতীশকেই জোটের প্রধান করা হোক। আসলে জেডিইউ নেতারা মনে করছেন, ভোটের পর সরকার গড়ার সুযোগ এলে জোটের প্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নীতীশ এগিয়ে থাকবেন।
কিন্তু এই ব্যাপারে আবার নীতীশের পাশে নেই লালুপ্রসাদের পার্টি আরজেডি। লালুপ্রসাদ সাম্প্রতিককালে একাধিকবার ইঙ্গিত করেছেন, ভোটের আগে ঘোষণা না করা হলেও সরকার গড়ার সুযোগ এলে তার পছন্দের প্রার্থী রাহুল গান্ধী। লালুপ্রসাদ এই ব্যাপারে পুরোপুরি কংগ্রেসের পাশেই রয়েছেন বলে পর্যবেক্ষকদের মত।