কোনো সমাধান ছাড়াই সপ্তম বছরে পা দিয়েছে রোহিঙ্গা সংকট। এমন প্রেক্ষাপটে নির্যাতিত এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তার তীব্র হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে আরো বিলম্ব এবং মানবিক সহায়তার ঘাটতি, পুরো অঞ্চলকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।”
রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।বলেছে, “১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে এত দীর্ঘ সময় আশ্রয় দেয়ার আর্থ-সামাজিক, জনসংখ্যাগত এবং পরিবেশগত ব্যয় বাংলাদেশকে শেষ সীমার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এই মানুষদের নিরাপদ এবং টেকসই পদ্ধতিতে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং অধিকার রয়েছে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “তাদের জন্মস্থান মিয়ানমারে এই সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায়িত্ব।”
রোহিঙ্গারা তাদের বহনযোগ্য দক্ষতা অর্জন করছে, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে এবং তাদের শিশুরা বাংলাদেশের ক্যাম্পে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে মিয়ানমার ভাষা শেখার সুবিধায় যোগ দিচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ধরে রাখতে পারবে এবং রাখাইনে ফেরার পর সমাজে সুচারুভাবে মিশে যেতে পারবে।
পুনর্বাসন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়
বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরতে পারবে না বলে উল্লেখ করেছে ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। বলেছে, পুনর্বাসন হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়; যেখানে তারা দায়িত্ব ভাগাভাগি করে কাজ করবে এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সার্বিক সমাধানে তারা অবদান রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, “আমরা অন্যান্য দেশের উদারতার প্রশংসা করি, যারা এই আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন প্রচেষ্টায় যোগ দিচ্ছে। আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার বাইরে থাকা দেশগুলো এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে।”
যুক্তরাষ্ট্র ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে ‘সাদরে গ্রহণ করেছে’।দূতাবাস বলেছে, “যেহেতু এই সংকট সপ্তম বছরে পদার্পণ করছে; আর, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা সমগ্র অঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে বা শেষ করতে সম্ভাব্য সব বিকল্পের অন্বেষণে অবিচল রয়েছি।’
গতকাল (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ এবং হত্যার নৃশংস অভিযানের ছয় বছর পূর্তি হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের ফলে তখন সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা তাদের বহনযোগ্য কিছু জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলো।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, “বাংলাদেশের জনগণ তখন তাদের উন্মুক্ত হস্তে, সহানুভূতি এবং মানবতার বোধ দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। প্রায় ১০ লাখ উদ্বাস্তুকে আতিথেয়তা অব্যাহত রাখায় আমরা বাংলাদেশের জনগণকে তাদের উদারতা এবং আতিথেয়তার জন্য প্রশংসা করি।”
দূতাবাস বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলে উদ্ভূত মানবিক সঙ্কটের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ২১০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা করেছে। এর মধ্যে ১৭০ কোটি ডলারের বেশি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে সহায়তা করার জন্য; যারা রোহিঙ্গাদের এত উদারভাবে আতিথ্য করে। আর, আমরা আমাদের সহযোগিতা প্রদানে অবিচল রয়েছি।”
দীর্ঘকাল থেকে ভুগতে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলেছে, তারা নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার, তাদের পরিবারকে শান্তিতে লালন-পালন করার ও অর্থবহ ও উদ্দেশ্য-পূর্ণ জীবনযাপন করার সুযোগ পাওয়ার যোগ্য।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক চাপ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এই নৃশংসতার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সঙ্কটের সমাধান,নির্যাতনের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলেছে, “মিয়ানমারের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটিকে মানবিক সহায়তা প্রদান চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আতিথেয়তা দানকারী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।”
ক্তরাষ্ট্র আরো বলেছে, বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সংকট যেমন সীমিত সম্পদ দিয়ে মোকাবেলা করে, তেমনি রোহিঙ্গারা কীভাবে তাদের স্বাগতিক সম্প্রদায় এবং তাদের নিজস্ব পরিবারের অর্থনৈতিক কল্যাণে অবদান রাখতে পারে তা চিহ্নিত করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।