শরতে বর্ষার আবহ বাংলাদেশে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকা, সবখানেই বৃষ্টির দাপট। কোথাও প্রবল বর্ষণ, কোথাও ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। আবহাওয়ার এমন আচরণে ধসে পড়ছে পাহাড়, তলিয়ে যাচ্ছে শস্যভরা জমি। আছে প্রাণহানি, বন্যার আশঙ্কা। এদিকে, আবারো বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে বাবা ও মেয়ের মৃত্যু
বাংলাদেশর চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড় ধসে বাবা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ২ জন।রবিবার (২৭ আগস্ট) সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটের দিকে পাচঁলাইশ থানার ষোলশহর এলাকার আই ডব্লিউ কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন; কলোনির বাসিন্দা কালা মিয়ার ছেলে মো. সোহেল (৩৫) ও তার মেয়েশিশু বিবি জান্নাত (৭)।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) নুরে আলম আশিক জানান, সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটের দিকে পাহাড় ধসে আহত ২ জনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। এর পর, চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোলরুম জানিয়েছে, সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় একটি কলোনিতে পাহাড় ধসের ঘটনার খবর পায় তারা। পরে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার টিম ঘটনাস্থলে যায়। একটি বসত ঘরে ঘুমন্ত বাসিন্দাদের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। এতে আহত ৪ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মহালছড়ি-গুইমারা সড়কে ভূমিধস
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার পঙ্খীমুড়া এলাকায় ভূমিধসে রবিবার (২৭ আগস্ট) সকাল থেকে মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান মেমং মারমা জানান, সকালে ভারি বর্ষণে ভূমিধসে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ভূমিধসের কারণে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, থ্রি-হুইলার, ট্রাক-সহ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল সড়ক থেকে মাটি সরাতে কাজ শুরু করছে বলেও জানান উপজেলা চেয়ারম্যান মেমং মারমা।
তিস্তা অববাহিকায় বাড়ছে জলস্তর
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে তিস্তা নদী প্রবাহিত হচ্ছে বিপদ সীমার উপর দিয়ে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলাসহ অনান্য নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের আসাম ও অরুণাচল প্রদেশে বৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক; সেই জলপ্রবাহ নেমে আসছে এসব নদনদী দিয়ে।
কুড়িগ্রাম জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি এখনো বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পানি বৃদ্ধির এই প্রবণতার কারণে, জেলায় স্বল্প মেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই-তিন দিন ধরে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। এছাড়া এই এলাকায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও তীর ভাঙে, কমলেও তীর ভাঙে। দিনরাত বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তারা।
পানি উউন্নয়ন বোর্ড-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ভারতের আসাম ও অরুণাচলে ভারী বৃষ্টিাত হচ্ছে। উজানের ঢল ও স্থানীয় বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও যে কোনো সময় বিপদ সীমায় পৌঁছাতে পারে। ফলে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় স্বল্পমেয়াদী বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। তবে, বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।”
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খাদ্য সহায়তা, উদ্ধার নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্রসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।”
আরো বৃষ্টি হতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর রবিবার (২৭ জুলাই) জানিয়েছে, ঢাকাসহ ৮ বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
রবিবার (২৭ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে,১৬৩ মিলিলিটার ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরো বলেছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।