অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সংসদের বিশেষ অধিবেশনে পাস হতে পারে মহিলা সংরক্ষণ বিল ভাবনা রাজনৈতিক মহলে


মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি সহমত, তাই-ই শুধু নয়, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী গত সাড়ে নয় বছরে দু’বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে বিলটি পাশ করানোর আর্জি জানিয়ে রেখেছেন। বিলটির ব্যাপারে আগ্রহী তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি সহমত, তাই-ই শুধু নয়, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী গত সাড়ে নয় বছরে দু’বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে বিলটি পাশ করানোর আর্জি জানিয়ে রেখেছেন। বিলটির ব্যাপারে আগ্রহী তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

ভারতের সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী বলেছেন, "কেন্দ্রের প্রস্তাবিত সংসদের বিশেষ অধিবেশনের এজেন্ডা দু-চারদিনের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। জল্পনা করে সময় নষ্ট অনর্থক।"

তবে সংবাদ সূত্রের খবর সেই মন্ত্রীর কথায় জল্পনা কমেনি। বরং বিরোধীদের পাশাপাশি শাসক দলের সাংসদেরাও বুঝতে চাইছেন ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশনের আলোচ্য বিষয় কী বা কী কী। বিজেপি-র সাংসদদের কাছেও এই প্রশ্নের সদুত্তর নেই।

শুরুতে অনেকেই ভেবেছিলেন বিশেষ অধিবেশনের মাধ্যমে সংসদের নতুন ভবনে যাত্রার সূচনা করা হবে। এছাড়াও মনে করা হয়েছিল চন্দ্রযানের চাঁদে সফল অবতরণের জন্য ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব নেওয়া হবে। রাকেশ শর্মার নেতৃত্বে ভারতের প্রথম মহাকাশ জয়ের পরও সংসদে প্রস্তাব পাশ করিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

এছাড়া এমন জল্পনাও ছিল যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে সংসদে প্রস্তাব পাশ করাতে পারে বিজেপি। দিল্লিতে জি-২০ দেশগুলির সম্মেলনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে এই বিশেষ সম্মানজ্ঞাপন সরকারের ভাবনায় থাকা অসম্ভব নয় বলেই ধারণা ছিল রাজনৈতিক মহলে। এছাড়া এমনও মনে করা হয়েছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখলের কথা সংসদে ঘোষণা করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংঘাতের বার্তা দিয়ে জাতীয়তাবাদের জিগির তুলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ‘এক দেশ এক ভোট’ ব্যবস্থা চালুর পক্ষে সংবিধান সংশোধনী বিল তো আছেই।

তবে বিরোধীদের আশঙ্কা মোদীর তাস মহিলা সংরক্ষণ বিলও। ১৯৯৬ সাল থেকে অর্থাৎ ২৭ বছর ধরে বিলটি সংসদে পাশ না হয়ে পড়ে আছে। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির মধ্যে বিরোধ বাঁধিয়ে দিতে বিলটি বিরাট বড় অস্ত্র হতে পারে মোদীর, মত বিশেষজ্ঞদের।

লোকসভায় এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য ১৯৯৬ সালে বিল আনা হয়েছিল। কিন্তু জাতের ইস্যুতে রাজনীতি করা দলগুলি তা মানতে চায়নি নানা আপত্তি তুলে।

২০১০ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার বিলটি ফের পাশ করানোর চেষ্টা করে। সেবার রাজ্যসভায় পাশ হলেও লোকসভায় করানো যায়নি জোট শরিক লালুপ্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি এছাড়া বহুজন সমাজবাদী পার্টি-সহ আরও কয়েকটি দল বিলটির বিরোধীতা করায়। নীতীশ কুমারের পার্টি জনতা দল ইউনাইটেড তখন বিজেপির সঙ্গে ছিল। ওই দলেরও আপত্তি আছে বিলের কিছু অংশ নিয়ে।

কিন্তু মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি সহমত, তাই-ই শুধু নয়, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী গত সাড়ে নয় বছরে দু’বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে বিলটি পাশ করানোর আর্জি জানিয়ে রেখেছেন। বিলটির ব্যাপারে আগ্রহী তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বাম দলগুলিও বারে বারে চেয়েছে বিলটি পাশ করানো হোক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী এখন বিরোধী জোটের বোঝাপড়ায় ভাঙন ধরাতেই বিলটি লোকসভায় পাশ করিয়ে নিতে পারেন। তাতে বিরোধী শিবিরে ভাঙন অবধারিত। কারণ, আরজেডি, এসপি, জেডিইউ চলতি বিলটি মানতে চাইবে না। তাদের বক্তব্য, ৩৩ শতাংশ আসনের মধ্যেই জনজাতি, দলিত, ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশের সিংহভাগ পার্টি এই জাতিগত সংরক্ষণের বিরুদ্ধে। তাদের বক্তব্য, জাতিগত সংরক্ষণটি ভবিষ্যতে দেখা যাবে। তাছাড়া প্রার্থী করার বিষয়ে দলই শেষ কথা। কোনও দল চাইলে ৩৩ শতাংশ সংরক্ষিত আসনে শুধুই জনজাতি, দলিত, ওবিসি-দের প্রার্থী করতে পারে।

এরপরও জাতিগত সংরক্ষণ ছাড়া বিলটি পাশ করাতে রাজি নন লালুপ্রসাদ, অখিলেশ, মায়াবতীরা। এই সুযোগে লোকসভার বিশেষ অধিবেশনে মোদী সরকার বিলটি পাশ করিয়ে মহিলা ভোটারের মন জয়ের নয়া রাস্তা বের করতে পারে। সরকারের সদিচ্ছাকে নয়া মাত্রা দিতেই বিলটি বিশেষ অধিবেশনে পাশ করানোর পরিকল্পনা হয়ে থাকতে পারে। এ ধরনের ভাবনাই দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে।

বিলটির বিষয়ে বিরোধী শিবিরের সিংহভাহ সমর্থন করলে এর সাফল্যে একা বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদী দাবি করতে পারবেন না ঠিকই। কিন্তু এই বিল পাশ করিয়ে ইন্ডিয়া জোটে বড় ধরনের ফাটল ধরানো সম্ভব তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল, আপ, বিআরএস, টিডিপি, ডিএমকে প্রভৃতি দলের বিলটি পূর্ণ সমর্থন করার কথা। ভারত রাষ্ট্র সমিতির সুপ্রিমো তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে কবিতা মাস কয়েক আগে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশের দাবিতে দিল্লির যন্ত্ররমন্তরে দু’দিন ধরনা দেন। তাকে সমর্থন জানিয়ে ভাষণ দেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সঙ্গ দেন তৃণমূলের সাংসদেরাও।

XS
SM
MD
LG