বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডাটা পরিষেবায় নতুন নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী তিনদিনের মেয়াদ আর থাকছেনা; সর্বনিম্ন মেয়াদ হবে ৭ দিনের। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে এই নতুন নিয়ম।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মোবাইল ফোন অপারেটরদের ডাটা এবং ডাটা-সংশ্লিষ্ট প্যাকেজ সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা বাস্তবায়ন বিষয়ে, বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, “মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেয়া ডাটা পরিষেবার ক্ষেত্রে তিন দিনের মেয়াদ নিয়ে সম্প্রতি আমার কাছে অনেক প্রশ্ন এসেছে। অনেকে বলেছেন, তারা ৩ দিনের জন্য কেনা ডাটা শেষ করতে পারেন না। মেয়াদ হিসেবে ৩ দিন খুব কম। সেজন্য এখন আমরা সেটি তুলে দিচ্ছি।”
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে যে ৩ দিনের প্যাকেজ তুলে দিয়ে গ্রাহকের সুবিধার্থে তা এখন সর্বনিম্ন মেয়াদ ৭ দিনের করা হয়েছে এবং ১৫ দিনের প্যাকেজ বাদ দেয়া হয়েছে।” তিনি বলেন, “আমরা ইন্টারনেটের মেয়াদ ভিত্তিক প্যাকেজ সংখ্যা কমিয়েছি। কারণ, মেয়াদের সংখ্যা বেশি থাকলে গ্রাহক বিভ্রান্ত হয়। আমরা ডাটা প্যাকের সর্বনিম্ন মেয়াদ করেছি ৭ দিনের। এর চেয়ে কম মেয়াদের কোনো ডাটা প্যাকেজ বিক্রি করা যাবে না। নতুন নিয়মে গ্রাহক পুরো ডাটা ব্যবহার করতে পারবেন।”
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “বর্তমানে মোবাইল ফোনে দেয়া ডাটার দাম ও গুণগত মান গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় তা বিলাসী পণ্য ছিলো, এখন তা প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে।”
অনুষ্ঠানে নতুন নির্দেশিকা উপস্থাপন করেন বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।
নতুন প্যাকেজ সংখ্যা ও মেয়াদ
কোনো অপারেটরের নিয়মিত (রেগুলার প্যাকেজ), বিশেষ প্যাকেজ (সিসিএসটি), রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট, সব ধরনের ব্র্যান্ড মিলিয়ে (ফ্ল্যাক্সিবল প্ল্যান অনুযায়ী) প্যাকেজের সংখ্যা হবে ৪০টি। এই সংখ্যা আগে ছিলো ৮৫টি। সব প্যাকেজের সময়সীমা হবে ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড, যা আগে ছিল ৩ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন ও ৩০ দিন।
আনলিমিটেড প্যাকেজের সংখ্যা ও ডাটা ভলিউম
প্রতিটি অপারেটর তিনটি ভিন্ন ভলিউমে আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ অফার করতে পারবে। এগুলো হবে ২৫ জিবি, ৫০ জিবি ও ৭৫ জিবি। অর্থাৎ, তিনটি ভলিউমের মধ্যে কোনো একটি আনলিমিটেড প্যাকেজ হিসেবে গণ্য হবে। বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে পরবর্তীতে ভলিউম পরিবর্তন করা যাবে।
ফ্ল্যাক্সিবল প্ল্যান প্যাকেজ ডিজাইন
যেসব গ্রাহক (মাই জিপি, মাই রবি, মাই বিএল, মাই টেলিটক) ব্যবহার করে, তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী টকটাইম, ডাটা ভলিউম, সোশ্যাল প্যাক, এসএমএস নির্বাচন করে, নিজের প্যাকেজ নিজেই ডিজাইন করতে পারবে। প্রদর্শিত মূল্য গ্রাহকের পছন্দ হলে, নিজেই তার মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে প্যাকেজটি গ্রহণ করতে পারবেন এবং এটি একটি রেগুলার প্যাকেজ হিসেবে গণ্য হবে।
বোনাস ও অব্যবহৃত ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড সুবিধা
নতুন নির্দেশিকায়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কিনলে ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে। একই ভলিউম-এর ৭ বা ৩০ দিন মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গ্রাহক উক্ত প্যাকেজ আবার কিনলে ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে। ক্যারি ফরওয়ার্ড করা যাবে সর্বোচ্চ ৫০ জিবি পর্যন্ত।
গ্রাহককে অপারেটররা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩টি প্রমোশনাল এসএমএস দিতে পারবে, যা পূর্বে ছিলো চারটি। সামাজিক প্যাকেজের ক্ষেত্রে, মেয়াদের মধ্যে একই প্যাক পুনরায় গ্রহণ করলে অব্যবহৃত ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে এবং বোনাস হিসেবে প্রদান করা ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড নিয়মের অন্তর্ভূক্ত হবে।
ডাটা শেষ হওয়ার আগে গ্রাহক-কে অবহিতকরণ
গ্রাহক-কে প্যাকেজের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার আগে, নতুন প্যাকেজ অফার প্রদান করলে অফারটি অবশ্যই একই প্যাকেজ হতে হবে এবং অন্য দুটি প্যাকেজ তার ব্যবহারের প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে হতে পারে। কোনো প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে ডাটার মেয়াদ শেষ হওয়ার নোটিফিকেশন পাঠাতে হবে। অব্যবহৃত ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড করার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, চলতি প্যাক পুনরায় কেনার নিদের্শনা এসএমএস এ থাকবে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “বর্তমানে মোবাইল ডাটার দাম ও গুণগত মান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন প্যাকেজের নীতিমালাটি আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। তবে গ্রাহকদের কল্যানে এট পরিবর্তন করা যাবে। শুধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য রক্ষায় বিটিআরসি কাজ করে না। বিটিআরসি জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করে।”