নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন অবিলম্বে বন্ধ করতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলেছে, “এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই শ্রম আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, “মুহাম্মদ ইউনুসের মামলা, বাংলাদেশের বিপর্যস্ত মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি দৃষ্টান্ত। যেখানে কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতা খর্ব করেছে এবং সমালোচকদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে।”
তিনি বলেন, “আইনের অপব্যবহার এবং প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকারের ন্যায়বিচারের নামে এই প্রহসন বন্ধ করার এখনই সময়।”
অ্যাগনেস ক্যালামার্ড উল্লেখ করেন, “অ্যামনেস্টি বিশ্বাস করে যে নাগরিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত ইস্যুগুলোর জন্য ইউনূস এবং তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু করা, শ্রম আইন এবং বিচার ব্যবস্থার চরম অপব্যবহার এবং তার কাজ এবং ভিন্নমতের জন্য রাজনৈতিক প্রতিশোধের একটি রূপ।”
তিনি বলেন, “ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে অস্বাভাবিক গতিতে বিচার চলছে, তা বাংলাদেশের অন্যান্য শ্রম অধিকার সম্পর্কিত আদালতের মামলার সম্পূর্ণ বিপরীত। এর মধ্যে ২০২২ সালে বিএম কন্টেইনার ডিপো এবং ২০২১ সালে হাশেম ফুডস ফ্যাক্টরি-তে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও রয়েছে। সেখানে নিয়োগকর্তার অবহেলা ও নিরাপত্তা মান না মানার কারণে প্রায় ১০০ জন শ্রমিক নিহত হন। উভয় ক্ষেত্রেই কোম্পানির মালিকরা কোনো ফৌজদারি দায়বদ্ধতার মুখোমুখি হননি এবং সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে জবাবদিহিতা এড়িয়ে গেছেন।”
অ্যাগনেস ক্যালামার্ড আরো বলেন, “ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের নিরলস অপপ্রচার প্রমাণ করে যে, ৮৩ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ীকে দণ্ডিত করার মধ্য দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনে কতটা মরিয়া হয়ে উঠতে ইচ্ছুক বর্তমান সরকার।”
ক্ষুদ্র ঋণের অগ্রদূতকে লক্ষ্যবস্তু করে, শ্রম আইনের অপব্যবহার না করে, ধারাবাহিক লঙ্ঘনের জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে আরো ভালভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড।
তিনি বলেন, “যারা শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করে তাদের নিঃসন্দেহে জবাবদিহি করতে হবে। তবে ড. ইউনূসকে হয়রানি করতে আইন ও বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার না করে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের উচিত হবে অনিরাপদ কারখানার মতো যেসব বিষয় শ্রমিক অধিকারকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলছে, যা বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিকের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, সে দিকে মনযোগ দেয়া।”
উল্লেখ্য, গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে এবং শ্রম আইন-২০০৬ এর অধীনে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। বোর্ডের অপর তিন সদস্য আশরাফুল হাসান, নূর জাহান বেগম ও মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়েছে।