বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে, বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে তিন দিন ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে। এমন পরিস্থিতিতে, দৈনিক প্রথম আলো’র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশারফ শাহের ওপর হামলা হয়েছে। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।
প্রথম আলোর প্রতিনিধির ওপর হামলা
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, দৈনিক প্রথম আলো’র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশারফ শাহের ওপর হামলা হয়েছে। এ হামলার জন্য ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সামনে তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন মোশারফ শাহ।
মোশারফ শাহ বলেন, “সংবাদ প্রকাশের জের ধরে আমাকে মেরে রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগের একাংশ। হামলাকারীরা ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-দল, চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের(সিএফসি) কর্মী।”
মোশাররফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য। মোশাররফকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মোশাররফ শাহ জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি উপাচার্যের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, ভাঙচুর, প্রধান প্রকৌশলীকে মারধরসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনের লক্ষ্যে বক্তব্য নেয়ার জন্য। এ সময় দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সামনে ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ কর্মী তাকে প্রথমে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এরপর, ছাত্রলীগ নিয়ে কেনো প্রতিবেদন তৈরি করেছেন, তা জানতে চান। কয়েকজন তার কপালে, মুখে কিলঘুষি দেন। তার বুকে লাথি দেন। হাতে আঘাত করেন। মোশাররফ আরো জানান, মারধরের সময় নেতা-কর্মীরা তাকে পরবর্তীতে আর ছাত্রলীগ নিয়ে প্রতিবেদন না ছাপানোর হুমকি দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আবু তৈয়ব বলেন, “মোশাররফের কপালে চারটি সেলাই দিতে হয়েছে। তার হাতেও আঘাত আছে। এক্সরে করাতে হবে। উন্নত চিকিৎসা জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
ছাত্রলীগের উপদল সিএফসির নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রেজাউল হক। তিনি বলেন, “এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা এ নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।”
ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত
অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে, তিন দিন ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরী সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।”
এদিকে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই উপ-দলের মধ্যে সর্বশেষ মারামারির ঘটনা ঘটে। এরপর রবিবার ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শনিবার সাড়ে ১১টা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে সংঘর্ষ হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের র্যাগ-ডে উদ্যাপনের সময় সিএফসি ও সিক্সটি নাইন নামে পরিচিত ছাত্রলীগের উপ-দলের সদস্যদের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের পর পরদিন, শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। অভিযানে, শাহজালাল হল থেকে বেশকিছু দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ এবং শাহ আমানত হল থেকে পাঁচ বহিরাগতকে আটক করা হয়।