গত বছর বিশ্ব নেতাদের বার্ষিক বৈঠকে জাতিসংঘ প্রধান মানবজাতি ও পৃথিবীর টিকে থাকা নিয়ে অশনি বার্তা দিয়েছিলেন। এ বছর আরও বড় আকারে তিনি সতর্কবাণী দিয়েছেন। তার বার্তায় তিনি সবাইকে এ মুহূর্তেই জেগে ওঠার ও উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় বক্তব্য রাখেন; যার উদ্দেশ্য, সবাইকে স্তম্ভিত করা। তিনি বলেন, “আমরা ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়ছি। আমরা একটি ‘বড় আকারের বিভাজনের’ দিকে ইঞ্চি ইঞ্চি করে আগাচ্ছি। সংঘাত, অভ্যুত্থান ও গোলযোগের মাত্রা বাড়ছে। জলবায়ু সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিগুলো, যেমন—ধনাঢ্য উত্তর ও দরিদ্র দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম এর মধ্যে বিভেদ বাড়ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে এক ‘নতুন সীমারেখা’ পার হয়েছি আমরা, যেখান থেকে আর পেছনে ফেরার উপায় নেই।”
গুতেরেস এর আগেও এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তবে এ বছরটিকে তিনি “গোলযোগপূর্ণ ক্রান্তিলগ্ন” হিসেবে অভিহিত করে নেতাদের উদ্দেশে আরো কড়া ও জরুরি বার্তা দেন। বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে দেওয়া তার আগের বক্তব্যগুলোর দিকে তাকালে পরিষ্কার হয় যে তিনি তার বক্তব্যগুলোর ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন ধরেই এই পথে হাঁটছেন।
২০১৭ সালে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বক্তব্যে গুতেরেস বৈশ্বিক হুমকির শীর্ষ কারণ হিসেবে “পারমাণবিক বিপর্যয়” কে চিহ্নিত করেন। ২ বছর পর, তিনি বিশ্বকে ২ ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টারনেট সেবা, মুদ্রা, বাণিজ্য ও আর্থিক আইন তৈরি করছিল এবং তার ভাষায়, “মূল্যহীন ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশল” অবলম্বন করছিল। তিনি সে সময় “এই বিশাল আকারের বিভেদ” এড়াতে পূর্ণাঙ্গ উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এরপর ২০২০ এর শুরুর দিকে কোভিড-১৯ মহামারি এলো। সেসময় গুতেরেস সারা বিশ্বকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানালেও তা কার্যকর হয়নি; ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিন পেয়েছে আর দরিদ্র দেশগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। গত বছর নেতাদের এই সমাবেশে তার দেওয়া বার্তা গত সপ্তাহের বার্তার মতোই গুরুতর ছিল: “আমাদের বিশ্ব বিপদগ্রস্ত ও পক্ষাঘাতে আক্রান্ত”, বলেন গুতেরেস। “বৈশ্বিক অকার্যকারিতা এক মহীরুহের আকার ধারণ করেছে, এবং আমরা এর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি।”
এ বছর সাধারণ অধিবেশনে জমায়েত হওয়া প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী রাজা ও মন্ত্রীদের প্রতি তার বার্তা ছিল দ্ব্যর্থহীন ও সোজাসাপটা।
“মনে হচ্ছে যেকোনো সমস্যার মোকাবিলায় একত্রিত হয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আমরা অপারগ”, বলেন গুতেরেস।