বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল। বিশেষ করে, উত্তরাঞ্চলে ভোগান্তি বাড়িয়েছে অকাল বর্ষণ। বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকেও নেমে আসছে জলের ধারা। ফলে, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা-সহ নানা নদ-নদীর পানি বেড়েছে। আবার জলমগ্ন হয়েছে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল। কোথাও দেখা দিয়েছে নদী-ভাঙন। আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, আরো বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশের আট বিভাগে।
বিপদসীমার উপরে তিস্তার প্রবাহ
উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে, কুড়িগ্রাম জেলায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাড়ছে অন্যন্য নদ-নদীর পানিও। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুঃশ্চিতায় পড়েছেন তীরবর্তী এলাকার আমন চাষীরা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কোথাও বিপদ সীমার ২৪৮ সেন্টিমিটার, কোথাও ২১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি বেড়েছে, তবে, কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপদ সীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দলদলিয়া ইউনিয়নে, তিস্তা নদীর অববাহিকার চাপড়ার পাড় এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, “রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার আমন খেতে পানি চলে আসে। সোমবার(২৫ সেপ্টেম্বর) ধান খেত তলিয়ে গেছে। জমিতে পানি উঠায় খুব চিন্তায় পড়ে গেছি। এর আগে দুইবার ফসল নষ্ট হয়েছে।”
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, “এরকম বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে শীতকালীন মরিচ ও চালকুমড়াসহ বিভিন্ন শাক সবজির ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতি হতে পারে রোপা আমনেরও।”
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, “গত ২৪ ঘন্টায় কুড়িগ্রামে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবারের (২৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে। আর, এই মুহূর্তে বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই।”
সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি আবার বৃদ্ধি পেয়েছে; প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল । সেইসঙ্গে নদী তীরবর্তী আরো নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যমুনার পানি ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত মাসের শেষ দিকে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে, বিশেষ করে, যমুনার তীরবর্তী শাহজাদপুর, বেলকুচি, কাজিপুর, চৌহালী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, এসব উপজেলার অনেক স্থানে তীব্র নদীভাঙ্গনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিকে যমুনার পানি কমতে থাকে এবং অনেক স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়।
রনজিত কুমার সরকার বলেন, “হঠাৎ কয়েকদিন ধরে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনার পানি আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। রবিবার কাজিপুর পয়েন্টে ৪৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যমুনা নদীর পানি এখনো বিপদ সীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।” আরো ৪/৫ দিন যমুনার পানি বাড়তে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বাজার সহ বিভিন্ন স্থাপনা। জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার দুর্গম নারায়ণপুর ইউনিয়নের পদ্মারচর গ্রামে অবস্থিত ভাঙন কবলিত পাগলার বাজার।চলতি বছরের বন্যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে বাজারের দেড়শ দোকানের মধ্যে ২২টি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে, পদ্মারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদ্মারচর আবাসন প্রকল্প, আবাদি জমি ও শতাধিক বসতবাড়ি।
বাজারটি রক্ষায় এলাকাবাসী, ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীগণ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।পাগলা বাজারের ইজারাদার শাহাজুল হক জানান, ২০১২ সালে বাজারটি স্থাপন করা হয়। এই বাজারের আশে পাশে আর কোন বাজার নেই। উত্তরে ৫ কিলোমিটার নৌপথে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা নারায়ণপুর বাজার।দক্ষিণে রয়েছে ১০ কিলোমিটার নৌপথে যাত্রাপুর বাজার। ১০টি চরের ২০ হাজার বাসিন্দার কেনাকাটার জন্য এটি একমাত্র বাজার।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি। পাগলার বাজারে ভাঙনের কথা আমরা জেনেছি। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
আরো বৃষ্টির আশঙ্কা
ঢাকাসহ আট বিভাগে আরো বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। বলেছে, হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়; রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আর, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু জায়গায়; বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ২৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।