বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচকে নামিয়ে এনেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা ফিচ রেটিংস। একই সঙ্গে, আইডিআর ‘বিবি মাইনাসে’ (বিবি-) নিশ্চিত করেছে।
আইডিআর ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের (যেমন কোনো সংস্থা বা সরকার) আর্থিক বাধ্যবাধকতা, খেলাপি হওয়ার আপেক্ষিক আশঙ্কা মূল্যায়নকে প্রতিনিধিত্ব করে। আইডিআর, দীর্ঘমেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রায় এর আর্থিক বাধ্যবাধকতা পূরণের সক্ষমতা নির্দেশ করে।
ফিচ-এর রেটিং অ্যাকশন-এর অর্থ হলো; খ্যাতনামা এই ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন; তবে পরিস্থিতি এখনো 'পরিচালনার যোগ্য' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফিচের ভাষ্যমতে, নেতিবাচক আউটলুক বাহ্যিক বাফার-এর (অর্থনীতিতে অভিঘাত প্রশমনের মতো উপাদান) অবনতি প্রতিফলিত করে; যা ঝুঁকি বৃদ্ধিকেও প্রতিফলিত করে। ফিচ বলছে, “এটি আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে যে, বিনিময় হার ব্যবস্থার পরিবর্তন ও বিদেশি ঋণদাতাদের অব্যাহত সমর্থন সত্বেও, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান নীতি প্রতিক্রিয়া, বৈদেশিক রিজার্ভের পতন রোধ করতে এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ডলারের তারল্য চাপ সমাধানের জন্য অপর্যাপ্ত।”
তারা আরো বলেছে, “ক্রমবর্ধমান আমদানি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রায় হস্তক্ষেপের কারণে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে থাকবে বলে আমরা পূর্বাভাস দিচ্ছি। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে মোট রিজার্ভ ১৯ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে; বা, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন তহবিলে বরাদ্দ অংশ বাদ দিয়ে ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।”
২০২৫ সালের মধ্যে দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি আরো বড় হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ফিচ। সংস্থাটি বলেছে, “নিয়ন্ত্রিত বিনিময় হার, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানিতে বিধিনিষেধ শিথিলের মধ্যে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি এখন বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।”
তারা বলছে, “বাংলাদেশের পরিচালনার যোগ্য বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের প্রোফাইল, এখেনা অনুকূল প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা-কে প্রতিফলিত করে।” ফিচ বলেছে, ২০২৪-২০২৫ সালের মধ্যে, বৈদেশিক ঋণের বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে সক্ষম হওয়া উচিত বাংলাদেশের।”
বিশ্লেষক ও ব্যাংকাররা বলছেন, যদি কোনো দেশের আউটলুক নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হয়; তবে আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে তহবিল সংগ্রহের সময় এটি উচ্চতর ঋণ ব্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। তারা বলেন, এতে সরকার ও ব্যবসায়ের জন্য আন্তর্জাতিক মূলধন প্রাপ্তি বা সংগ্রহ আরো ব্যয়বহুল হতে পারে।
তারা উল্লেখ করেন যে আরেকটি প্রভাব রয়েছে; বিদেশি বিনিয়োগের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, অবনতিশীল ক্রেডিট প্রোফাইলের দেশগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম থাকে।