অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার—যা বলছেন অর্থনীতিবিদেরা


বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি (ইউএস) ডলারে। রিজার্ভ কমে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করেছেন সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ এবং নীতি বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে রিজার্ভ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বিলম্বিত পাওনা পরিশোধ, বিনিয়োগকারীদের বিদেশে এফডিআই মুনাফা গ্রহণের প্রবণতা, অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস, মূলধন উত্তোলন ও মানি লন্ডারিং।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আইএমএফের রিজার্ভ গণনা পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মঙ্গলবার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি (২১.১৫ বিলিয়ন) ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, এক সপ্তাহ আগে ২১ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৪৫ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কয়েক দিনের মধ্যে ৩০ কোটি ডলার কমে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ইউএনবিকে বলেন, জ্বালানি আমদানি রপ্তানি বিলম্বিত হওয়া এবং পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের এফডিআই মুনাফা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কারণে এটি ঘটেছে।

তিনি বলেন, বিলম্বিত পাওনা পরিশোধ না করা হলে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমদানি, বিশেষ করে জ্বালানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা বিবেচনা করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও তাদের মুনাফা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার চাপে রয়েছেন।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর ইউএনবিকে বলেন, রেমিট্যান্স আহরণ কমে যাওয়া এবং মানি লন্ডারিং বেড়ে যাওয়ার ফলে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, অনিশ্চয়তা থাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। তিনি বলেন, একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে যদি একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হয়, তাহলে আস্থার মাত্রা উন্নত হওয়ার কারণে অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে দেশের গ্রস রিজার্ভ (ইডিএফ তহবিল এবং রিজার্ভ থেকে ঋণ অন্তর্ভুক্ত) ছিল ২ হাজার ৯২৩ কোটি ডলার।

বর্তমানে, গড় মাসিক আমদানি ব্যয় ৬০০ কোটি ডলার। এই হিসাবে তিন মাসের আমদানি চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন হবে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ, বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে, নিয়ন্ত্রিত ব্যয় ব্যবস্থার বাংলাদেশ ব্যাংক নীতির অধীনে তিন মাসের সামান্য বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যেতে পারে। আমদানিতে আরও কমালে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বাজারে ডলারের প্রবাহ কমেছে। এদিকে নতুন এলসি খুলতে হবে এবং আগের এলসির ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণসহ অন্য ঋণও পরিশোধ করতে হবে।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে হবে নভেম্বরের শুরুতে। এতে রিজার্ভ আরও কমতে পারে।

আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৪৮ কোটি ডলার নভেম্বরে মওকুফ হতে পারে।

এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কিছু ঋণও সে সময় ছাড় দেওয়া হতে পারে। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বাড়তে পারে। বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

XS
SM
MD
LG